বনসৃজন রচনা (Banasrijan)

বনসৃজন রচনা (Banasrijan)

একটি পয়সার যেমন দুটি পিঠ থাকে তেমনি এই সমাজের দুটি পিঠ আছে, তার এক পিঠে যদি মানুষ থাকে তবে অন্য দিকে আছে গাছ, তাই আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় বনসৃজন প্রবন্ধ রচনা।

বনসৃজন রচনা (Banasrijan)

বনসৃজন ও পরিবেশ রক্ষা (Banasrijan) – আজ সমাজের উন্নতির সাথে সাথে নানান প্রয়োজনে মানুষ সমাজ গাছ পালা তথা বন নষ্ট করে ফেলছে। তাতে করে যেমন আমরা নিজেদের ক্ষতি করছি। তেমনি এই পৃথিবী অন্যান্য প্রাণীকুলের পরিবেশ নষ্ট করছি। অনেক হয়েছে এই বনের বিনাশ, আর নয়, এবার দরকার একত্র বনসৃজন (Banasrijan)

ভূমিকাঃ-

বনসৃজন কাকে বলে – মানুষের সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে বন জঙ্গল কেটে নষ্ট করে ফেলছে, এখন সময় এসেছে, গাছ পালা, বন জঙ্গল নষ্ট না করে নতুন করে বৃক্ষরোপন কোরান, একেই বলে বনসৃজন।

মানুষের প্রাণ শক্তির অন্যতম উৎস হলো গাছ। অরণ্য মানুষকে দিয়েছে খাদ্য, বাতাস, আশ্রয়, আরো অনেক কিছু। আদিম মানুষ একদিন অরণ্যে প্রাণের সঞ্জীবনী খুজে পেয়েছিল।

আরণ্যক মানুষ অরণ্যের সম্পদ বৃক্ষলতাকে দেবতা বলে পূজা করেছে। এবং অরণ্য সম্পদ কে ভালোবেসে রক্ষা করেছে।

কিন্তু সভ্যতা বিকাশের ফলে মানুষ নির্মমের মত অরণ্য ধ্বংস করে শহর বসতি নির্মাণ করেছে। ফলে অরণ্য জননীর ধ্বংসের মুখে ধুলে পড়েছে। এর প্রতিক্রিয়া পৃথিবীতে দূষণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। জীবন ধারণ আজ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই বৃক্ষ নিধন নয় নতুন বৃক্ষরোপণ করাই হোক আমাদের নতুন সংকল্প বাণী।

বনসম্পদ ও বনসৃজনঃ-

মানব সভ্যতার বৃক্ষের প্রয়োজন অসীম। গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ফিরিয়ে দেয় প্রাণ ধরণের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন।

মানুষের জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে মুক্ত করতে। বন্যা ও ভাঙ্গন রোধে নানা রোগ প্রতিরোধে আবহাওয়া ও জলবায়ু ভারসাম্য বজায় রাখতে গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমবিস্তারে যে হারে অরণ্য সংহারের কার্য চলছে তাকে আরণ রক্ষার জন্য সুপরিকল্পিত উপায় বা বনসৃজন করা আবশ্যক।

অরণ্যের অবদানঃ-

প্রাচীন ভারতে বনভূমিতে গড়ে ওঠা তপবন ছিল আশ্রমিক শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র। জীবনদায়ী ওষুধ বলতে একদা বনের গাছ-গাছরা কে বোঝাত। বিজ্ঞানের অদ্ভুতপূর্ব উন্নতিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবর্ণনীয় সাফল্য এসেছে একথা ঠিক।

এছাড়া এলোপ্যাথিক হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতিতে বোন ও বোনের গাছপালা সবচেয়ে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে আজও।

বৃক্ষরোপণঃ-

প্রকৃতিকে শ্যামল স্নিগ্ধ জননী রূপে কল্পনা করে তাকে ভালোবেসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ভারতে বৃক্ষরোপন উৎসবের সূচনা করেন।

বনসৃজন ও সংরক্ষণের রূপায়ণের ভারত সরকারও নানান পরিকল্পনা নিয়েছে। আজ দেশের সর্বত্র প্রতিবছর বাৎসরিক উৎসবের মতো বনসৃজন সপ্তাহ বিপুল উৎসাহে পালিত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে ভারত সরকার প্রথম বন-মহোৎসব পালন করেন।

একটি গাছ একটি প্রাণঃ-

সমাজ দেশ ও দশের স্বার্থে সবুজায়ন আবশ্যক। আগামী দিনের শিশুর মুক্ত বায়ুতে শ্বাস গ্রহণের স্বার্থে বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্র শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বস্তুত প্রতিটি নাগরিককেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। একদিকে বৃক্ষরক্ষা অন্যদিকে বনসৃজন এই উভয় কাজই একসঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।

এটি কোন একজন বা এক গোষ্ঠীর কাজ নয় এটি সকলের কাজ। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটি গাছ একটি প্রাণ এই এই বাক্য মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। নিজেদের প্রয়োজন ও বাঁচার তাগিদে আজ প্রত্যেককে একটি করে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।

আসার কথা দিকে দিকে সবুজয়ালের জন্য সমাজভিত্তিক বনসৃজন শুরু হয়েছে। মানুষের সচেতনতার হাত ধরে দেশে আবার সবুজ বলাকা পাখা মেলবে। আমাদের এই আশা অবশ্য পূর্ণ হবে।

গাছের সঙ্গে মানব-প্রাণের অঙ্গাঙ্গিভাবে যোগ রয়েছে। যে অক্সিজেন দেয় তার মূল্য অপরিসীম। একথা মনে রাখলে আমরা আর গাছ কাটতে পারব না। বরং উৎসাহিত হব নতুন গাছ লাগাতে। আমাদের সম্মিলিতভাবে বনসৃজনে উদ্যোগী হওয়া।

Leave a Comment