মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা [Mattri Vasai Bigyan Charcha Essay]

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা ‘মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা’ প্রবন্ধটি তোমারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়ো।যদি এইভাবে তুমি পরীক্ষায় খাতায় ফুটিয়ে তোলো তাহলে অবশ্যই তুমি ফুলমার্কস পাবে। তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক প্রবন্ধ টি।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা [Mattri Vasai Bigyan Charcha Essay]

ভূমিকাঃ-

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথায় – মাতৃভাষা হল মাতৃদুগ্ধ।সেজন্য মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ যুগে যুগে জ্ঞানের চর্চা করে আসছে। প্রাচীন ভারতের আর্যভট্ট, বরাহমিহির,লীলাবতী প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব বিজ্ঞান চর্চা করেছেন মাতৃভাষার মাধ্যমে।এমনকি গ্রিস,চিন,মিশর প্রভৃতি দেশও নিজ নিজ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করে আসছে।

মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তাঃ-

মানুষ তার মাতৃভাষার প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল। মাতৃভাষা মানুষ প্রকৃতিগতভাবে আয়ত্ত্ব করে বলে সেই ভাষায় অর্জন করা সব কিছুই তার কাছে অনেক আপন মনে হয়। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মনের স্বাভাবিক বিকাশের উপযুক্ত মাধ্যম। এক্ষেত্রে মাতৃভাষার চেয়ে উত্তম কোন মাধ্যম হতে পারে না।জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা সবচেয়ে উপযোগী ভূমিকা পালন করে। একমাত্র মাতৃভাষায় পারে প্রাণের সাথে ভাবের মিলন ঘটাতে। বিদেশী ভাষায় কখনো একজন শিক্ষার্থীর মনের ভাব যথাযথভাবে ফুটে ওঠে না মাতৃভাষার আকুলতা এবং ভাবদ্যোতনা কোন ভাষার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না তাই বিজ্ঞান চর্চায় মাতৃভাষা প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বিজ্ঞানচর্চাঃ-

যুক্তিবাদের পথ ধরেই বিজ্ঞান চর্চার প্রসার। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ অসাধ্যসাধন করছে। তাই বিজ্ঞান সম্বন্ধে মানুষের কৌতূহল বাড়ছে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা,কুসংস্কার,প্রথাবদ্ধতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে মানুষ ক্রমশ বিজ্ঞানের উপর আস্থা রাখছে। সেজন্য বিজ্ঞানের নব নব বিষয় সম্বন্ধে মানুষ আরো জানতে চাইছে। জানার আগ্রহ থেকে বিজ্ঞান চর্চার প্রসার বাড়ছে এই বিজ্ঞান চর্চাকে আরো প্রসারিত করার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে মাতৃভাষায় বিভিন্ন লেখা।

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাঃ-

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ হলেন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়,জগদানন্দ রায়, রবীন্দ্রনাথ, চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রমুখ মনীষী। রামেন্দ্র সুন্দরের ‘জিজ্ঞাসা’ জগদীশচন্দ্রের ‘অব্যক্ত’ ‘আবিষ্কার’ জগদানন্দের ‘প্রাকৃতিকী’ ‘বৈজ্ঞানিকী’ রবীন্দ্রনাথের ‘বিশ্বপরিচয়’ চারুচন্দ্রের ‘নব্যবিজ্ঞান’ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় করে তুলেছে। বিশেষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার পর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার যৌক্তিকতাঃ-

বিশেষ কোনো ভাষা বিজ্ঞান চর্চার শর্ত নয়। আর্কিমিডিস, মাদাম কুরি, নীলস বোর যথাক্রমে গ্রিক, সংস্কৃত, ফরাসি এবং জার্মান প্রভৃতি তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করেছেন।মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষার ব্যবহার শিখতে যে শিক্ষণ সময় ব্যয় হয় মাতৃভাষায় যিনি বিজ্ঞান চর্চা করছেন তিনি সেই সময়টি বিজ্ঞান চর্চার কাজে ব্যয় করতে পারেন।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সীমাবদ্ধতাঃ-

একথা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার কিছু আপাতসীমাবদ্ধতা আছে।প্রথম অসুবিধা হলো উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের অভাব এবং পরিভাষার জটিলতা।বাংলা ভাষাকে বিজ্ঞান চর্চার উপযুক্ত করে তুলতে হলে এগুলির ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।

উপসংহারঃ-

বিজ্ঞানকে গণমুখী করতে হলে বিজ্ঞান বিষয়ে মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনা প্রয়োজন।কিন্তু কারা সেই গ্রন্থ রচনা করবেন? আগামী কালের যারা বিজ্ঞানী গবেষক কিংবা বিজ্ঞানের যারা শিক্ষক বা অধ্যাপক তারাই।কাজেই আজ বিজ্ঞান শিক্ষাকে যদি জনপ্রিয়, সার্বজনীন করতে হয় তবে তা মাতৃভাষায় করতে হবে কারণ মনে রাখতে হবে বাঙালি ছেলে ইংরেজি বিদ্যায় যতই পাকা হোক তবু শিক্ষা পুরো করবার জন্য তাকে বাংলা ভাষা শিখতেই হবে।

Leave a Comment

Don`t copy text!