একটি ট্রামের আত্মকথা রচনা [Ekti Tram er Attakatha]

শুধু মানুষ, প্রাণীর আত্মকথা থাকবে তা কিন্তু নয়, এক নির্জীব বস্তুরও মনের কথা থাকতে পারে যেমন একটি ট্রামের আত্মকথা [Ekti Tram er Attakatha], যা ফুটে উঠতে পারে একজন শিশুর মুখে অথবা একজন কবির ভাষায় নতুবা একটি ছাত্রের প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের এই ট্রামের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনাটি।

একটি ট্রামের আত্মকথা রচনা [Ekti Tram er Attakatha]

ভূমিকাঃ-

তুমি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো হ্যাঁ তুমি ঠিক চিনতে পেরেছ। সেটা ভাবছো আর দেখে দেখে মিলিয়ে নিচ্ছ বড়দের কথা মতো। গল্পে আমার ব্যাপারে অনেক অনেক কথা শুনেছো। তবে তা কতদূর ঠিক সে আমি জানিনা।

তাই বরং তোমাকে আমার মনের কয়েকটা কথা শোনায় যাতে করে আমার মনটা হালকা হবে আর তুমিও জানতে পারবে কলকাতা শহরের একটি ট্রামের আত্মকথা।

জীবনকথাঃ-

সে আজ অনেকদিন আগে কার কথা, সবে যখন শহর ধীরে ধীরে সেজে উঠেছে, তখন সাধারণ লোকজনের যাতায়াতের পথের উপর নতুন পথ কেটে শহরের মানুষজনের ইচ্ছামতো আমাকে তৈরি করলো। হিসাব মতো আমাকে পথে নামিয়ে দেয়া হলো।

মানুষজনের তখন সে কি আগ্রহ। আমার মধ্যে তৈরি করলো ছোট খাটো দুটি কামরা। আমার শরীর উপরে যুক্ত করলো বিদ্যুতের তার। আমার সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগ ঘটালো। এতে করে অবিশ্বাস্য ভাবে আমি চলতে লাগলাম।

আমার চলার গতি তেমন দ্রুত ছিলনা বিটে কিন্তু গর গর আওয়াজ ভালই ছিল। একজন আমার কাজ হলো যাত্রীদের সুস্থ নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।

আমার এই ধীর গতির কাজ তুমি আজকের এই গতির যুগের সঙ্গে মেলাতে পারবেনা। তারও আগে যখন বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল না, তখন আমি ছিলাম ঘড়ায় টানা গাড়ির মত।

বরাবরই আমি একটি ধীর স্থির যানবাহন এবং পরের নির্দেশ মত চলাই আমার কাজ। আমি আমার বাঁধানো পথ কিছুতেই ছাড়তে পারি না। তোমাদের ব্যস্ত জীবনকে বয়ে বেড়ায়।

এখানে আরও অন্য ধরনের গাড়ি আছে। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমার জন্য তারা থমকে দাঁড়ায়। এবার কেউ কেউ পাশ কেটে চলে যায়। তবে তাদের আমার মত বাধা পথ নেই বলেই হয়তো কোথাও যেন তাদের বাধা নেই।

আমার বল কি শুধু একই পথে যাওয়া? আজকের ব্যস্ততার যুগেও আমি আমার মতই থেকে গিয়েছি। তোমাদের সভ্যতার সঙ্গে প্রয়োজনের সঙ্গে বদলে নিতে কিছুতেই পারিনি।

হঠাৎ থামা হঠাৎ চলাতে আমার কোন অসুবিধা নেই। তোমাদের যাওয়ার প্রয়োজন আমি বুঝি তবে অন্যান্য জনের দুরন্ত গতিকে টেক্কা দেয়ার দরকার আমার হয় না।

অনুশোচনাঃ-

আমার সমগ্র জীবন জুড়ে একটা অনুশোচনা আমাকে ভীষণ তাড়া করে বেড়ায়। সেটি হলো প্রতিষ্ঠিত এক কবি ছিলেন, নাম তাঁর জীবনানন্দ দাশ। তিনি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন।

আমাদের বুকের গভীরে আজও তার বুকের ক্ষত আত্মগোপন করে আছে, লোকে বলে আমার দোষ ছিল না। তিনি সম্ভবত আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাহলে হয়তো কবি কে বাঁচানো যেত তাহলে হয়তো তার লেখা আরো অনবদ্য সব কবিতায় বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতো।

ঐতিহ্যের প্রতীকঃ-

অনেকের কাছে আজ আমি উপহাসের পাত্র। পুরনো হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই কদর হারায়। তোমাদের এই কালে ও যে আমার কলকব্জা চলছে। এ তো আমার গর্ব। এ আমার নিজস্বতা।

রাস্তায় আমি অন্যান্য কারও দিকে একদম নজর দেই না তা নয়, কিন্তু নিজেকে তুলনামূলক বিচার করে ছোট মনে করি না। হয়তো তোমার শহর আমাকে ঐতিহ্যের প্রতীক করে তুলেছে এ নিয়ে আমি একটুও ভাবিনি। কারন আমার কাজের কর্তব্যে আমি কখনো অলস নই তাই।

উপসংহারঃ-

শহর আমাকে নিয়ে চিন্তিত। আমি পরিবেশ বান্ধব। আমার দ্বারা এই দূষিত শহরের দূষণ বৃদ্ধির অবকাশ নেই মোটেই। তুমি দূরে সরে যাচ্ছ কেন? আমার কোলে এসে বসো। অশান্ত অস্থির শহরের ব্যস্ততায় তুমি আমার আলোর কুলি।

আমার একোল অনেক আগে থেকে অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দিয়ে তৈরি। তোমাকে আমার পথ ও পাশের পরিবেশ চিনিয়ে নিয়ে চলি। আর তুমি তোমার লক্ষ-পথ স্থির করে নাও। আবার দেখা হবে অন্যদিন অন্য কোনখানে।

Leave a Comment