মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? কয়েকজন ভক্তিবাদী গুরুর নাম লিখ।

মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? কয়েকজন ভক্তিবাদী গুরুর নাম লিখ।

মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? কয়েকজন ভক্তিবাদী গুরুর নাম লিখ।


ভূমিকাঃ

ভারতে সুলতানি যুগে হিন্দু ধর্মের যাগযজ্ঞ, ধর্মীয় আড়ম্বর এবং সমাজের অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে যে উদার ধর্মীয় আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা ভক্তিবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত।

ভক্তি আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তারা সকলেই ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সমন্বয়ের কথা প্রচার করেন। তাঁদের মতে, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, তাঁরা সকলেই ভক্তিকেই ধর্মীয় উপাসনার পন্থা হিসেবে গ্রহণ করে ছিলেন।

ভক্তিবাদের উৎসঃ-

ভক্তিবাদের উৎস সম্পর্কে গবেষক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ইতিহাসবিদ ‘গ্রিয়ারসন’ মনে করেন “খ্রিস্ট ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ভক্তিবাদের আদর্শ এসেছে। অন্যদিকে ঐতিহাসিক ‘ইউসুফ হোসেন’-এর মতে ‘ ইসলাম ধর্মের একেশ্বরবাদ ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের আদর্শ থেকেই হিন্দু ধর্মে ভক্তিবাদের উদ্ভব ঘটেছে’।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ভক্তিবাদের উৎস আমাদের কাছে খুব বেশি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে আরও বিতর্ক বিদ্যমান।

ভক্তিবাদের বৈশিষ্ট্যঃ-

এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যেমন………

ভক্তিবাদের মূল আদর্শঃ ভক্তিবাদের মূল আদর্শগুলি ছিল-যাগযজ্ঞ পৌত্তলিকতা, ব্রাহ্মণ প্রাধান্যের পরিবর্তে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ করা।বহু দেবতার পরিবর্তে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন, হিন্দু ধর্মের বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতার বিরোধীতা করা এবং জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

সম্প্রীতি স্থাপনঃ-

এই সমস্ত ধর্মাচার্যের প্রচারকার্যের ফলে উভয় ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি হবার পথ উন্মোচিত হয়েছিল পরস্পর পরস্পরকে বুঝা ও ঐক্য বিধানের প্রচেষ্টা জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।

হিন্দু ধর্মের সংস্কার সাধনঃ-

হিন্দু ধর্মের অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধন অনেকখানি বাস্তব রূপ গ্রহণ করেছিল । হিন্দু ধর্মের সংস্কার সাধনের ফলে ইসলামের অগ্রগতি অনেকখানি প্রতিহত হয়েছিল।

প্রাদেশিক ভাষার উন্নতিঃ-

ভক্তি আন্দোলনের ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল দেখা দেয় প্রাদেশিক ভাষার ক্ষেত্রে। ধর্ম সংস্কাররা সংস্কৃতেরর পরিবর্তে সাধারণের বোধগম্য প্রাদেশিক গ্রন্থাদি রচনা করেন।

কবিরের দোঁহা গুলি হিন্দি ভাষায়, নামদেবের রচনা সমূহ মারাঠি ভাষায়, বৈষ্ণব পদাবলী বাংলা ভাষায় এবং নানকের রচনাবলী গুরুমুখী ভাষাকে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী করে তুলেছিল।

সামাজিক সাম্যঃ-

ভক্তিবাদী প্রচারকরা ছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর অন্তর্গত তাদের কেউ ছিলেন পেশায় কারিগর, আবার কেউ কৃষক শ্রীচৈতন্যদেবের মত ব্রাহ্মণ ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেও আন্দোলনে ডাকে সাড়া দেন সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের জনগণ এই ভক্তি আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের সীমিত পরিসরে আবদ্ধ ছিল না এই আন্দোলন সমাজে সামাজিক প্রতিষ্ঠার পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক ছিল।

উপসংহারঃ-

আপাত দৃষ্টিতে ভক্তিবাদী আন্দোলন মধ্যযুগের ভারতে সামাজিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করলেও বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তন ঘটেনি।সমাজের খুব অল্প সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়েছিল তবে একথা ঠিক যে ভক্তিবাদী আন্দোলন ভারতীয় ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে ছিল এক ফল পদ ঘটনা কারণ এই আন্দোলন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির পরিবেশ রচনা করেছিল।

কয়েকজন ভক্তিবাদী প্রবক্তা হলেন কবির.রামানন্দ,নামদেব, শ্রী চৈতন্যদেব

Leave a Comment