প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ রচনা [Prottohik Jibone Bidyut Essay]

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমরা কি অনলাইনে ‘প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ’ বা ‘দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ’ প্রবন্ধ রচনাটি খুঁজছো তাও আবার একদম সহজ-সরল চলিত ভাষায় তাহলে অবশ্যই তুমি একদম সঠিক পোস্টেই এসে উপস্থিত হয়েছো।

প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ রচনা [Prottahik Jibone Bidyut Essay]

এই আর্টিকেলে আমি তোমাদের জন্যে এটি সেইভাবেই উপস্থাপন করেছি যেইভাবে তুমি চাইছো।তাহলে চলো আর দেরি না করে দেখে নেওয়া যাক প্রবন্ধ টি।

ভূমিকাঃ-

বর্তমান সময় বিদ্যুৎ ছাড়া সবকিছুই যেন অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকার মতো অবস্থা যা আমাদের কাছে একটি দুঃসাধ্য বিষয় যেখানে অতীতে মানুষকে বিদ্যুৎ তো দূরের কথা নিজের বাসস্থান টুকু পর্যন্ত ছিলো না আর সেইসব দিন অতিক্রম করে বর্তমান সময় সম্পূর্ণ রূপে বিদ্যুৎ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি আমরা অর্থাৎ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বিদ্যুৎ আমাদের সঙ্গী।বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা আমরা কল্পানাও করতে পারিনা।

আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎঃ-

বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য আবিষ্কার বিদ্যুৎ যা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনে অনুগত ভৃত্যের ন্যায় তাকে ব্যবহার করে। বিদ্যুৎ বর্তমানে আমাদের কাছে সোনার কাঠির স্পর্শের মতো অর্থাৎ কি কলকারখানায়, কি কৃষিকাজে, কি চিকিৎসায় সর্বত্রই যেন বিদ্যুৎ এর ছড়াছড়ি। বিদ্যুতের সাহায্যে কলকারখানা চলে,বৃদ্ধি হয় উৎপাদন,বৃদ্ধি হয় জাতীয় সম্পদ, কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের সাহায্যে গভীর নলকূপ থেকে জল সেচ করে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। গ্রামের তাঁতিরা যন্ত্রচালিত তাঁতের সাহায্যে উৎকৃষ্ট ধরনের কাপড় উৎপাদন করছে। এককথায় বলতে বিদ্যুৎ হলো প্রগতির প্রাণ শক্তি।

সংবাদ, সংযোগ ও সম্প্রচারে বিদ্যুৎঃ-

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের প্রভাব অপরিসীম।সকালেই সারা পৃথিবীর সংবাদ বহন করে একটি সংবাদপত্র যখন আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় তখন আমরা কি ভাবতে পারি এত অল্প সময়ে এত বড় সংবাদপত্রটি ছাপা হয়ে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে যা কেবলমাত্র বিদ্যুৎ চালিত মুদ্রণ যন্ত্রে এটি মুদ্রিত হয়েছে বলেই সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ আজ সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে দূরত্বকে সংকুচিত করেছে। দূরকে করেছে নিকট।

পৃথিবীর যেকোন স্থানের খবরা খবর আমরা মুহূর্তের মধ্যে পেতে পারি টেলিগ্রাম,টেলিফোনের মাধ্যমে দূর-দূরান্তের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। এগুলির সাহায্যে ব্যবসায়ীরা দেশ-বিদেশে ছড়ানো তার ব্যবসার খবর জানতে পারেন স্বদেশী বা বিদেশে অবস্থিত লোকেরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন।

আবাসিক জীবনের বিদ্যুৎঃ-

এখন ৫০-৬০ তলা বাড়িতে ওঠবার জন্য আর একের পর এক সিঁড়ি ভাঙ্গার কোন দরকার নেই সেখানে উঠার জন্য বিদ্যুৎ চালিত লিফট রয়েছে। যা ক্ষণিকের মধ্যে আমাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দেয়।বাড়িতে জল তোলার জন্য বিদ্যুৎ চালিত পাম্প রয়েছে। একদিন বিদ্যুৎ না থাকলে যে কি পরিমাণ কষ্ট তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বিদ্যুতের অসীম কৃপায় আজকাল আর কয়লার উনুনের কোন প্রয়োজন হয় না।

বর্তমান সময়ে রান্নাবান্নার জন্য ইলেকট্রিক হিটার, কুকার তো রয়েছে এতে এক দিকে যেমন সময় সাশ্রয় হয় অন্যদিকে কয়লার ধোঁয়া বা কালিরহাত থেকে বাঁচা যায় বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের সাহায্যে কাপড় কাঁচা, ভ্যাকুয়াম পাম্পের সাহায্যে ঘর পরিষ্কার করা সহজ হয়েছে।

বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে যাতে মাছ, মাংস শাকসবজি নষ্ট না হয় তার জন্য এখন ঘরে ঘরে বিজ্ঞানের আশ্চর্য রেফ্রিজারেটর রয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে মন যখন অবসন্ন হয়ে আসে অর্থাৎ যখন আর কাজে মন বসতে চাই না অর্থাৎ যখন মন ভালো থাকে না তখন মানুষ রেডিওর মাধ্যমে কিংবা সিডি বা ডিভিডির মাধ্যমে সুরের ঝংকার আর সংগীতের লহরীতে আনন্দে মেতে উঠে দূর হয়ে যায় মনের ক্লান্তি অবসাদ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিদ্যুৎঃ-

রোগাক্রান্ত মানুষকেও বিদ্যুৎ আশার আলো দেখিয়েছে। এক্স রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসকেরা এখন নিখুঁতভাবে দেহের ভেতর রোগ নির্ণয় করে যথোপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সারিয়ে তুলছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ‘Electro therapy’ নামে অভিহিত করা হয়। রেডিয়াম রশ্মি,বেগুনি রশ্মি বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে আমাদের রোগ নিরাময়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করে।

পরিবহনে বিদ্যুৎঃ-

পরিবহন ব্যবস্থাতেও বিদ্যুতের দান অনস্বীকার্য। বৈদ্যুতিক ট্রেনে করে দূর দূরান্তের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন শহরে এসে অফিস করতে পারে। নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে আবার ফিরে যেতে পারে কারণ ইলেকট্রিক ইঞ্জিন চালিত ট্রেন বাষ্প চালিত ইঞ্জিনের চেয়ে যথেষ্ট দ্রুতগতি সম্পন্ন তাছাড়া শহর কলকাতায় ট্রাম চলে বিদ্যুতের সাহায্যে বড় বড় জাহাজের মাল ওঠানো নামানো হয় বিদ্যুৎ চালিত ট্রেনের সাহায্যে।

উপসংহারঃ-

বিদ্যুৎকে অপর্যাপ্ত ব্যবহার করায় মানুষকে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মানুষ বিদ্যুতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই সামাজিক জীবন যাপন স্তব্ধ হয়ে যায়। এ কথা মনে রাখতে হবে যে যতদিন না সমাজে সার্বিকভাবে বিদ্যুতের সুফল পৌঁছে দিতে পারব ততদিন আমাদের দেশের উন্নতি অসম্পূর্ণই থাকবে।

Leave a Comment