ভূমিকাঃ-
মানুষ এর যে সকল গুণাবলী বৈশিষ্ট্য মানুষকে সত্যিকার অর্থেই মানুষ করে তোলে তার মধ্যে অন্যতম হলো মহত্ব যদিও আমরা মানব শিশু হয়েই জন্মগ্রহণ করি তবুও মানুষ হয়ে উঠতে আমাদেরকে অনেক বেগ পেতে হয় প্রাণ থাকলেই যে কেউ প্রাণী হিসেবে পরিচিতি পায় কিন্তু মানুষ হতে হলে আমাদের মধ্যে থাকতে হয়
মনুষ্যত্ব পশুদের মধ্যে পশুত্ব অর্জনের কোন ব্যাপার নেই কিন্তু আমাদেরকে মনুষ্যত্ব মহত্ব নিজেদের ভেতর ধারণ করতে হয় তবেই আমরা মানুষ হতে পারি মনুষ্যত্ব বা মহত্ব ছাড়া যে মানুষ বেঁচে থাকে তাকে তুলনা করা হয় পশুর সাথে বিবেচনা বোধ থাকে না বিবেক থাকে না তেমনি ন্যূনতম মনুষ্যত্ব আর মহত্ত্ব যার মধ্যে নেই সেও বিবেক বিবেচনাহীন না মাত্র মানুষ প্রকৃতপক্ষে মানুষ হওয়ার যোগ্যতা সে অর্জন করতে পারেনা
মহত্ত্বঃ-
মহত্ত্ব হল এমন একটি মানবীয় গুণ যা মানুষের সৎ গুন গুলোর সম্মিলিত একটি অবস্থাকে নির্দেশ করে আর এই মানুষের নিজস্ব আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় মহত্ত্ব হলো মানুষের সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা তাকে বহন করে তোলে।
লিও টলস্টয় এর মতে সারল্য সততা আর সত্যের সম্মিলিত রোগ হল মহত্ব প্রকৃতপক্ষে মহত্ত্ব হল এমন একটি গুণ যা সংজ্ঞায়িত করা মোটেও সহজ নয়। বরং তা অনুভব করা সহজ ।
মহত্ত্বের স্বরূপঃ-
আত্মসুখে মগ্ন না থেকে পরের মঙ্গল সাধন করা সমাজ সভ্যতা দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করা নিজের কথা না ভেবে অন্যের কথা ভাবা ব্যক্তির স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সমষ্টিগত স্বার্থকে রক্ষা করা এগুলো সবই মহত্বের লক্ষণ মহত্ব এমন একটি শক্তি যা মানুষকে সব সময় কল্যাণের পথে পরিচালিত করে।
সকল প্রকার স্বার্থপরতা কলুষতা সংকীর্ণতা হীনতা কুপ্রবৃত্তি পরশ্রীকাতরতা থেকে দূরে রেখে মহত্ব মানুষকে আলোর পথের যাত্রী করে মহত্ত্ব হল সেই গুন যা মানুষকে আত্মসর্গ করতে শেখায় মহত্ত্ব হলো সেই বিমূর্ত ধারণা একজন না মাত্র মানুষ এবং সত্যিকার অর্থে মানুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে দূরে রাখে এবং একই সাথে তাকে পরার্থপরতার চর্চা করতে শেখায়
মহত্ত্ব অর্জনের উপায়ঃ-
জগত বিখ্যাত লেখক ও নাট্যকার শেক্সপিয়ারের মতে কেউ কেউ মহৎ হয়ে জন্ম নেয় আবার কেউ কেউ মহত্ব অর্জন করে জন্ম কেউ হয়তো মহত্ত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য লাভ করে, কিন্তু তাকে মহৎ হতে উৎসাহী কিংবা নিরস্রাহী করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাই মহত্ব যতখানি সহজাত তার চেয়ে বেশি অর্জনের বিষয় ।
পরিবার ও সমাজের পরিবার ও সমাজের অন্যান্য যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে সেগুলোর ইতিবাচক অবস্থা মানুষের ভেতরে সৎ গুন গুলোর অনুপ্রবেশ ঘটায় অন্যদিকে নেতিবাচক পরিবেশ ব্যক্তির সৎ হয়ে ওঠা ব্যাহত হয় যে শিশুটির ছোটবেলা থেকেই হিংসা-বিদ্বেষ আর সহিংসতায় বড় হয় তার জন্য মহত্ব নতুন ধারণা তাই মহৎ তো অর্জন করা তার জন্য সহজ নয় ।
আর তার কাছে সেটা প্রত্যাশা করা যায় না কিন্তু যে শিশু বড় হয়ে বড় হয় এমন কোন পরিবেশ এ যেখানে সহযোগিতা পণ্য মনোভাব পোষণ করে সম্প্রীতি বজায় রেখে চলে সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হয় সে শিশুর মধ্যে অল্প বয়সে মহত্বের লক্ষণ দেখা যায় মহত্ত্ব অর্জনের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার যে পরিবারের সদস্যরা মনুষ্যত্বের বিশ্বাসী মানব সেবা আর অন্যের মঙ্গল সাধন যাদের ধর্ম সেই পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশু সময়ের সাথে সাথেই মহত্ব অর্জন করে আবার মানুষ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন বলে অনেকে হয়তো প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও নিচের বিবেচনা দিয়েও মহৎ হতে পারে তবে মহত্ত্ব অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সঠিক সমাজিকীকরণ
উপসংহারঃ-
মানুষের জীবনের সার্থকতা হল সমাজ ও সমাজের মানুষের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করা সারা জীবন নিজেকে মানবতার সেবায় নিয়োজিত রাখতে পারা যে সমাজে সে বেড়ে ওঠে সেই সমাজ দেশকে সে প্রতিদান দিতে পারে মানুষের মহত্ব ও মানবতা সমাজকে এবং মানব জীবনকে উন্নত করে মহৎ ব্যক্তিরা তাদের মহত্ব দিয়ে সমাজ রাষ্ট্র ও ব্যক্তির জীবনকে সুখী সমৃদ্ধ ও সুন্দর করে তোলেন প্রায় সকলের কাছেই মহত্ব খুবই কাক্ষিগত একটি গুণ