পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (Poribesh Dushan O Tar Protikar)

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (Poribesh Dushan O Tar Protikar)

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (Poribesh Dushan O Tar Protikar)

ভূমিকাঃ-

পরিবেশ বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা অর্থাৎ আমাদের চারপাশে যা কিছু বিরাজমান সেসব নিয়েই আমাদের পরিবেশ যেমন গাছপালা, পশুপাখি, মাছ, কীটপতঙ্গ, বন্যপ্রাণী, শব্দ,আলো,রাস্তাঘাট,বায়ু,মাটি, জল ঘরবাড়ি, কলকারখানা সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্গত কিন্তু দুর্ভাগ্য বর্তমান সময়ে পরিবেশ যন্ত্রযুগের বিষবাষ্পে এবং নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার ঘাত প্রতিঘাতে ক্রমে ক্রমে এ বিশুদ্ধ পরিবেশ দূষিতর মুখোমুখি হচ্ছে।বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বায়ু নিভে যেতে বসেছে আলো। দিন দিন পরিবেশ দূষণের ফলে এক ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

পরিবেশের উপাদানসমূহঃ-

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান গুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো-

১.নির্জীব উপাদানঃ—– জল, বায়ু, মৃত্তিকা, ইট, পাথর,বালি ইত্যাদি।

২.সজীব উপাদানঃ—– উদ্ভিদ,পশুপাখি, মানুষ ইত্যাদি।

পরিবেশ দূষণের কারণসমূহঃ-

পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে।যেগুলি নিম্মরূপ জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ,বনশূণ্যতা ও মরুকরণ,রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার,যুদ্ধ ও সংঘর্ষ,বায়ুদূষণ,মাটিদূষণ,শব্দদূষণ,জলদূষণ,গ্রীন হাউস এফেক্ট ও রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা জনসংখ্যা বিষ্ফোরণঃ-

পরিবেশ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা জনসংখ্যা বিস্ফোরণ।কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তার চাহিদা,বাসস্থান,শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বিনোদন সহ সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এতে ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। যেভাবে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের যে কোন মেগাসিটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। যত্রতত্র ময়লা- আবর্জনা, রাস্তাঘাট অপর্যাপ্ত, জায়গা অপর্যাপ্ত যেখানে লাখো মানুষের বসবাস সবকিছু চাহিদা তুলনায় অল্প যা পরিবেশ দূষণের জন্য যথেষ্ট।

বনসম্পদ শূণ্যতা ও মরুকরণঃ-

পরিবেশ দূষণের বহু কারণের মধ্যে একটি অন্যতম সক্রিয় কারণ হচ্ছে বৃক্ষচ্ছেদন।যার পরিণাম মরুকরণ। জ্বালানি কাঠ এবং ঘরের আসবাবপত্র হিসাবে আমরা যা কিছু ব্যবহার করছি তার পরিবর্তে আমরা ধীরে ধীরে বনভূমিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। হয়ে উঠছে মরুময় আর তাই দেখা দিচ্ছে কখনো অতিবৃষ্টি কখনো বা অনাবৃষ্টি।আমরা যে শুধু বনভূমি হারাচ্ছি তা নয় তার সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাতে ধ্বংস করে ফেলছি হাজার হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদগোষ্ঠীকে।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারঃ-

যেহেতু জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই তাদের খাদ্যেরও প্রয়োজনও বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই আমরা ভালো ও উন্নত ফসল ফলানোর জন্য স্যার ও কীটনাশক এর ব্যবহার করে থাকি। অপরিকল্পিত ও ব্যাপক হারে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জীবজগৎ, পরিবেশ, মাছ ইত্যাদি আজ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি।

যুদ্ধ ও সংঘর্ষঃ-

যুদ্ধ মানুষের জীবনে শুধু ধ্বংসই ডেকে নিয়ে আসে তা নয় পরিবেশেরও ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ তারই একটি বিভীষিকাময় স্বাক্ষর বহন করছে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকি শহর।পরমাণু অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে তাই পরিবেশের জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধ সংঘর্ষ।

বায়ুদূষণঃ-

মানুষের জীবন ধারণের একটি অন্যতম মূল উপাদান হলো বিশুদ্ধ বায়ু।কিন্তু ময়লা,আবর্জনা কার্বন-ডাই-অক্সাইড,কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন, সালফাইড, ক্লোরাইড,হাইড্রোকার্বন সমূহ ফটো কেমিক্যাল অক্সিভেট, বেরেলিয়ান পারদ বায়ুকে ব্যাপকভাবে দূষিত করছে যার ফলে আমাদের বেঁচে থাকার মুখ্য উপাদান বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে।

শব্দদূষণঃ-

পরিবেশ দূষণের আরো একটি মুখ্য কারণ হলো শব্দ দূষণ। বর্তমানে শব্দ দূষণের প্রধান উৎস হলো গাড়ির হর্ন,যানবাহনের শব্দ, মাইকের শব্দ, কলকারখানা থেকে নির্গত শব্দ ইত্যাদি যা শব্দ দূষণের জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী। এই শব্দদূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মানসিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।

জলদূষণঃ-

জল দূষণের কারণেও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে যেমন জৈব আবর্জনাসমূহ,অজৈব রাসায়নিক পদার্থ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং তেলবাহী জাহাজের তেল সাগরে পড়েও ব্যাপকভাবে জল দূষিত হচ্ছে। আর যার কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে জলচর প্রাণী সমূহ।

মৃত্তিকা দূষণঃ-

পরিবেশ দূষণের একটি মূল কারণগুলির একটি হলো মৃত্তিকা দূষণ।এই মৃত্তিকা দূষণের কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি কারণ জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পেয়েছে তত খাদ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে আর সেই খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে কৃষকরা ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে যে কারণে মৃত্তিকা দূষিত হচ্ছে।

রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহারঃ-

পরিবেশের শত্রু অপদ্রব্য গুলো হল সীসা,পারদ, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।কার্বন কণা থেকে শুরু করে ভারী ধাতু গুলো পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার সমূহঃ-

মানুষ পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে সৃষ্টির সেরা জীব তাই এর উচিত পরিবেশ দূষণের প্রতিকার করা।আর এটা যে কোন মানুষের ই কাম্য। গ্রীন হাউস এফেক্ট রোধ করা যেমন দরকার তেমনি কলকারখানা ধোঁয়া, গাড়ির শব্দ, রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিম্নে বর্ণনা করা হলো যেগুলি কিছুটা হলেও পরিবেশ দূষণের রোধ করতে সমর্থ হবে—

১….. জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন করে আইনত কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।

২…..বনসম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে,পাশাপাশি নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করতে হবে।

৩….. নিরাপদ জল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৪…..পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন ও শিল্প কলকারখানা স্থাপন করতে হবে।

উপসংহারঃ-

পরিবেশ দূষণ সমস্যা নিয়ে আজ সব দেশ-ই চিন্তিত। সভ্যতার অস্তিত্বই আজ এক সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।পরিবেশ দূষণ বন্ধের জন্য এখনো প্রতিবছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। আজ পরিবেশ দূষণ মানব সভ্যতার জন্য ভয়ংকর বিপদের পূর্বাভাস।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোন মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Leave a Comment