ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা [Ishwar Chandra Vidyasagar Rachana]

ছোট ভাই বন্ধুরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা [Ishwar Chandra Vidyasagar Rachana] টি পাঠ্ করলে যে শুধু তুমি পরীক্ষার খাতায় লিখে রচনা টি আসতে পারবে শুধু তা নয়। এটি পাঠ্ করলে তুমি এই মহাপুরুষ সম্পর্কে অনেক নিত্য নতুন তথ্য জানতে পারবে, যা পরবর্তী জীবনে আপনার পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করবে। এছাড়া আপনি এটি পড়লে একজন আদর্শ সত, সাহসী আর হৃদয়ই মানুষের পরিচয় পাবে। যা আমাদের আর প্রত্যেকটা ছাত্র ছাত্রীর জিবনের পথেরপথেও করে রাখা দরকার।

ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা [Ishwar Chandra Vidyasagar Rachana]

আশাকরি প্রবন্ধ রচনাটি একবার পড়লেই সহজে বুঝতে পারবে, যদি বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই কমেন্টে জানাবে, আমরা তোমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো। তো চলুন বিদ্যাসাগর রচনাটি দেখে নেওয়াজাক।

ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা

ভূমিকা:

আমরা ধন্য এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগরের মত মানুষের জন্ম। বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মা ভগবতী দেবী। তাঁর কাজকর্ম আর কর্মের দুঃসাহসিকতা দেখলে রীতি মত অবাক হতে হয়।

আজ তার কর্মের সুফল আনন্দের সাথে গ্রহণ করছি। তার বীরত্ব, সাহসিকতা, এক নিষ্ঠতা কোনোকিছুই পাঠকের কাছে অজানা নয়।

তাই হয়তো মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার স্ত্রীকে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন:-

  • বিদ্যাসাগরের ক্ষমতা হলো ইংরেজদের মত।
  • পণ্ডিত যেনো ভারতীয় মুনি ঋষিদের মত।
  • আর তার হৃদয়? ‘বাঙালি মেয়ের’ মত কোমল নরম।

বাল্য কাল শিক্ষা পরিচিতি:

হুগলি জেলার তাঁর জন্ম (বর্তমানে যা মেদনি পুরের অন্তর্গত) গ্রামের নাম বীরসিংহ। ১৮২০ সালের ২৬সে সেপ্টেম্বর ঠাকুরদাস নামের এক দরিদ্র পরিবারের তার জন্ম। প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।

পড়াশোনায় ছিল তার অসাধারণ দক্ষতা। শিক্ষা ও মেধাবীকতার পরিচয় দিয়ে ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর [Vidyasagar] উপাধি লাভ করেন। বাল্য কলে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা। তার পর সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা গ্রহন। তারপর তিনি Law পরীক্ষায় পাস করেন।

কর্ম জীবন:

প্রথমে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে সহ সম্পাদক হিসাবে যোগদান, পরে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত। গতানুগতিক শিক্ষার নিয়মাবলী পরিবর্তন করে ছাত্রদের শিক্ষা এক নতুন আলোয় পরিচালনা করেছিলেন। তার দক্ষ কাজ কর্মের মধ্যে যা না বললেই নয় তা হলো:-

  • পাঠ্যক্রম সংস্কার।
  • সংস্কৃতের জটিল ব্যাকরণ এর পরিবর্তে সহজ সরল ব্যাকরণের নির্মাণ।
  • গণিতে ইংরেজির ব্যাবহার।
  • দর্শনে লজিকের পরিবর্তন।

এ ছাড়া তার অন্যতম কর্ম হলো, কলেজে ব্রাম্বন ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশাধিকার শুরু করা। শুধু সামাজিক দিক নয় শিক্ষাগত দিক থেকেও তার সৃষ্টি অনেক, যেমন : বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয় ইত্যাদি।

তার বাংলা গদ্য গল্পঃ গুলিও “সাহিত্যের অনেকটা অংশ জুড়ে আছে, সৃষ্টি বেতাল পঞ্চবিংসতি, শকুন্তলা, সিতার বনবাস আজও বাঙালির প্রিয় বই।

সামাজিক কাজকর্ম:

তিনি পড়াশোনার আলোকে শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি। নিজের পড়াশোনায় গুন কে কাজে লাগিয়েছেন নানা বিধ ভালো কাজের মধ্যে। তিনি প্রথম বিধবা বিবাহ আইন চালু করেন। মানুষের মনের কু প্রথাকে ভেঙে দিয়ে, নিজের [নারায়ণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়] ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন একজন বিধবা নাড়ীর সাথে। একই সাথে বাল্য বিবাহ আর কৌলীন্য প্রথার মত জঘন্ন প্রথাকে বন্দ করতেও উদ্যত হয়েছিলেন।

এছাড়া তিনি মেয়াদের শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর বিশেষ দৃষ্টিপাত করেছিলেন। সেকালে মেয়াদের উপর যে অসহ্য নিপীড়ন হতো তার বিরোধিতা করেছিলেন। মেয়াদের পড়াশোনার জন্য নিজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন।

তিনি যেমন ছিলেন বিলাসবিহিন বর্জিত, তেমনি আবার মানুষের বিপদে ততটাই সহৃদয়। নিজের পরিবারে প্রতি ছিল বিশেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। এই সব দেখে তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলে:-

  • “তার চরিত্রের তাহার আজেয় পৌরুষ তাহার অক্ষয় মানুসত্ব”
  • বিদ্যাসাগরের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা”

পৃথিবীতে খুব কম মানুষই হয় যার কোনো শত্রু থাকেনা, আর সেই দলেরই একজন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রাজ-রাজরা থেকে শুরু করে হিন্দু কলেজের শিক্ষক, সাধারণ মানুষ সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করতেন। কথাবার্তা আর মনুষত্ব তাকে করে তুলেছিল সকল মানুষের প্রাণের প্রিয়। বলাইবাহুল্য আর পাঁচ জনের মত সহজ সাধারণ মানুষ হয়েও তিনি ছিলেন সাধারণের অনেক উর্দে। তিনি এক বিরল মনুষত্বের অধীন, তিনি এক মহামানব।

উপসংহার:

[বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯ শে জুলাই পরলােকগমন করেন] কথায় আছে যখন সমাজ ধ্বংসের পথে ধাবিত হয় তখন কোনো না কোনো মহাপুরুষের আবির্ভাব হয় আর সেই ধ্বংশপ্রায় সমাজে ফিরিয়ে আনে ন্যায়ের আলো।। তেমনি এক মহাপুরুষ বলাচলে আমাদের প্রাণের প্রিয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদযাসাগরকে। তার আবির্ভাব হয়তো শুধু সমাজের সামাজিকতা রক্ষার জন্য নহে, সঙ্গে এই শুষ্ক কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের সমাপ্তি ঘটিয়ে এক নতুন কুসংস্কার মুক্ত ঘটানোর জন্য।

Leave a Comment