চটি গল্প (শেষ প্রহরের অপেক্ষা)

পল্লবী গ্রাম্য মেয়ে, যার জীবন বড় স্বপ্নে মোড়ানো। তার বাবা-মা তাকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করাচ্ছেন। পল্লবীর ইচ্ছে শহরে গিয়ে বড় চাকরি করবে এবং তার পরিবারের দুঃখ মোচন করবে। একদিন, শহরের নামকরা একটি কলেজে ভর্তি হয়ে পল্লবী গ্রামের বাড়ি ছেড়ে রওনা হয়। শহরের জীবন তার কাছে একেবারেই নতুন।

কলেজে প্রথম দিনেই পল্লবীর সঙ্গে পরিচয় হয় অর্ণবের। অর্ণব শহরের ছেলে, স্মার্ট, মেধাবী এবং সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত। পল্লবীর সরলতায় অর্ণব মুগ্ধ হয়। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। প্রতিদিন ক্লাস শেষে তারা একসঙ্গে সময় কাটায়। অর্ণব পল্লবীর জীবনে আলো নিয়ে আসে, আর পল্লবী অর্ণবের মধ্যে এক নতুন উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে।

একদিন তারা কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। সেই সন্ধ্যায় তারা একে অপরের প্রতি মনের কথা স্বীকার করে। তাদের সম্পর্ক প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পল্লবী ও অর্ণব একসঙ্গে অনেক সময় কাটায়। তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করে, যেন তাদের মধ্যে কোনো দুঃখ-দুর্দশার ছায়া নেই।

কিন্তু পল্লবীর মনে ছিল এক গভীর গোপনীয়তা। তার একটি রোগ রয়েছে যা সে অর্ণবের কাছে কখনও প্রকাশ করেনি। ডাক্তার বলেছিলেন, তার হার্টে একটি জটিল সমস্যা রয়েছে, এবং বড় সার্জারির প্রয়োজন। তবে এই অপারেশন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তার পরিবারের নেই। পল্লবী সবকিছু জানে, তবুও অর্ণবের সঙ্গে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটানোর চেষ্টা করে।

অর্ণব পল্লবীর মধ্যে একধরনের পরিবর্তন লক্ষ করে। সে বুঝতে পারে, পল্লবী যেন কিছু লুকোচ্ছে। একদিন পল্লবীকে জিজ্ঞাসা করলে, সে কাঁদতে কাঁদতে সব কথা বলে। অর্ণব শুনে হতবাক হয়ে যায়। সে পল্লবীকে আশ্বস্ত করে যে, যেভাবেই হোক, তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করবে। অর্ণব তার পরিবারের সঞ্চয়, নিজের পড়াশোনার স্কলারশিপের টাকা সব পল্লবীর চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে চায়।

তাদের জীবনের সুখ যেন আবার ফিরতে শুরু করে। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস তখনও অপেক্ষায় ছিল। পল্লবীর অপারেশন ঠিক হওয়ার আগের দিন, তারা একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য দূরে এক পার্কে যায়। সেই দিনটি তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ফেরার পথে তাদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

অর্ণব প্রচণ্ড আঘাত পায়, কিন্তু তার প্রাণ রক্ষা পায়। পল্লবীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা ছিল সংকটজনক। ডাক্তাররা বলে, তার জীবন বাঁচাতে অপারেশন জরুরি, কিন্তু তার শরীর এতটাই দুর্বল যে, সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

অর্ণব হাসপাতালের বাইরে বসে কাঁদছিল। সে জানত না, কাকে দোষ দেবে। ভাগ্য, সময়, নাকি নিজের অক্ষমতাকে। পল্লবী অপারেশনের টেবিলে চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। অবশেষে ডাক্তার এসে জানায়, পল্লবী আর নেই।

অর্ণবের জীবন থমকে যায়। সে বুঝতে পারে, পল্লবী তার জীবন থেকে চিরতরে চলে গেছে, কিন্তু তার স্মৃতি চিরকাল অর্ণবের মনে থাকবে। পল্লবীর মৃত্যু অর্ণবকে জীবনের প্রকৃত অর্থ শিখিয়ে যায়—প্রেম মানে শুধু পাওয়া নয়, ত্যাগ করাও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top