দীপিকা বিশ্বাস ডান চোখ লাফালে ভালো কিছু হয়, আবার বাম চোখ লাফালে কোনো না কোনো বিপদ আসে। কারণ সে চোখ লাফানো টা অনেকদিন ধরে অনুসরন করছে। সে দেখেছে যখন তার ডান চোখ লাফাই তার কিছুদিনের মধ্যে ভালো কিছু হয়। আবার যখন বাম চোখ লাফাই তার কয়েক দিনের মধ্যে হয় কিছু খারাপ খবর আসে, বা খারাপ কিছু ঘটে।
অন্য দিকে অঞ্জলীও চোখ লাফানোর ব্যাপার টা অনেক দিন হলো নোটিশ করছে, সে দেখেছে লাস্ট বার যখন বাম চোখ লাফিয়ে ছিলো তখন তার ইংলিশ অনার্স ফাস্ট ক্লাস এসেছিল। আবার এই কিছু দীন আগেই যখন বাম চোখ লাগিয়েছিল তখন তার হঠাৎ করে জ্বর আসার জন্য অনেক দিনের আশা করে থাকা সিমলা বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কেনসিল করতে হলো।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ করেছেন। দীপিকার বেলায় ডান চোখ লাফানো টা ভালোর লক্ষণ আর নাম চোখ লাফানো টা খারাপের লক্ষণ।
অন্যদিকে অঞ্জলীর বেলায় একদম তার বিপরীত। তাহলে কি ব্যাক্তি বিশেষে চোখ লাফানোর ভালো মন্দ নির্ভর করে?
একদমই সে রকম কিছু না। এগুলো সম্পূর্ণভাবে ভাবে ব্যাক্তির চিন্তা ও মনের ওপর নির্ভর করে। এটা শুধু মাত্র তার মনের মধ্যে পুষে রাখা কু-সংস্কার মাত্র। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাহলে প্রশ্ন হলো চোঁখ লাফাই কেন?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরামর্শ অনুযায়ী চোখ লাফানোর অনেক কারণ হতে পারে। যখন বাম চোখে সমস্যা হয় তখন বাম চোখ লাফাই আবার ডান চোখে প্রেসার পরলে ডান চোখ লাফাই। এর সঙ্গে বাস্তবের ঘটনার কোনো সম্পর্ক বা মিল নেই।
তাহলে চোখ লাগলে ভাল বা খারাপ কিছু হয় কি?
হ্যা হতে পারে তবে তার জন্য আপনি দায়ী। আপনি চাইলে চোখ লাফান (ডান বা বাম চোখ) ব্যাপারটা সবসময় ভালো হিসাবে দেখতে পারেন। চলুন একটা উদাহরন দিয়ে বোঝানো যাক:-
ধরুন আপনার বাম চোখ টা সকালে কয়েক বার লাফিয়েছে। এবার আপনি ভাবছেন- হয়তো এবার খারাপ কিছু হবে। এটা প্রতি নিয়ত ভেবেই চলেছেন(মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকিয়ে নিয়েছেন), হয়তো এই কিছু হবে এই কিছু হবে, এই ভাবে আপনি হাঁটতে হাঁটতে অফিস বা স্কুল বেড়িয়ে পড়লেন। মাথার মধ্যে আপনি সেই খারাপ চিন্তায় করেচলেছেন। এতে করে আপনি অসতর্ক হয়ে পড়লেন আর দেখা গেলো আপনি একটি ইটে হোঁচট খেয়ে পরে গেলেন আর আপনার হাতের কুণুই টা কেটে গেলো।
এখন আপনি ভাবছেন সকালে চোখ লাফিয়েছিলো বলেই এই বিপদ হলো। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। চোখ লাফানোর কারণে, আপনি অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তাই এই বিপদ ঘটলো। আপনি যদি নিশ্চিন্তে সব দিক লক্ষ রেখে রাস্তা হাঁটতেন, তবে এমন বিপদ হতনা।
সুতরাং ডান চোখ লাফাক আর বাম চোখ নাচুক, এই ব্যাপার গুলো সম্পূর্ন ভাবে এড়িয়ে যান। এর জন্য কিছু ভালও হয়না বা খারাপ হয়না।
চোখ লাফানোর যে সমস্ত কারণ হতে পারে।
- ঘুম কম হলে বা কম ঘুমোলে চোখে অনেক প্রেসার পড়ে এর কারণে যেকোনো একটি চক বা দুটি চোখের পাতা নাচতে পারে।
- অত্যাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার অথবা রাত জেগে মোবাইল ব্যাবহার করলে চোখ লাফাতে পারে।
- চোখে অনেক বেশি আলো পড়লে, বা উজ্জ্বল আলোর দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলে পরবর্তী সময় চোখ লাফাতে পারে।
- দেখা গেছে যারা বেশি মদ পান করে বা নেশা করে, নার্ভের উত্তেজনা বা কম উত্তেজনার কারণে তাদের চোখ লাগিয়ে থাকে।
- মানসিক চাপ বাড়লে, বা চাপ নিলে চোখ লাগানো ব্যাপারটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
- যে ব্যাক্তি বেশি চা, কফি পান করে, অথবা মিষ্টি খাবার খেতে ভালো ভালোবাসে তাদের সাধারণের তুলনায় বেশি চোখ লাফাই।
- চোখে জীবাণু বা ভাইরাস সংক্রমণ হলেও কিন্তু চোঁখ লাফানটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
- রাসায়নিক পদার্থ, নোংরা, ধোঁয়া চোখে প্রবেশ করলেও কিন্তু চোখ নাচতে পারে।
বাম চোখ লাফালে কি হয়? কিছুই হয়ইনা, চোখ লাফানোর ব্যাপারটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়, কম বেশি সব মানুষেরই চোখ লাফায়। তবে এর সাথে বাহ্যিক ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও থাকে তবে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।
চোখ লাফান বন্ধ করার উপায়।
- সাধারণ বেশ কিছু বার চোখের পাতা লাফানোর পর ১ মিনিটের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়
- তবুও যদি বেশি সময় ধরে হতে থাকে, বা বার বার হতে থাকে তবে আপনি চোখে জলের ঝাপটা দিতে পারেন।
- রাতে অবশ্যই ৮-১০ ঘন্টা ঘুমান। এতে চোখ ও শরীর দুই ভালো থাকবে।
- ইয়গা ব্যায়াম করুন। মানসিক ভাবে নিজেকে শান্ত করুন।
- উজ্জ্বল আলোতে বেরোলে, কালো সানগ্লাস ব্যাবহার করতে পারেন।
- পারলে গাছের নিচে, শান্ত জায়গায় কিছু সময় কাটান।
- ফোন, মোবাইল, টেলিভিশন এগুলো কম দেখুন আর কম ব্যাবহার করুন।
- এসব করেও যদি চোখ লাফানো বন্ধ না হয়, আর বেশ কিছুদিন ধরে চলতেই থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে