ভূমিকাঃ-
বিজ্ঞানী হলভেন বলেছেন ‘আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ’। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্তেও কল্পনা করতে পারিনা। বিজ্ঞান জীবনে এনে দিয়েছে গতি।আমাদের চারপাশে বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জীবনকে সুন্দর করার জন্যই চায় বিজ্ঞান শিক্ষা। বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েই বিশ্বায়নের এ যুগে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব।নয়তো অন্ধকার পৃথিবীতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে হবে।প্রবীণ যুগের অসভ্য ও বর্বর জীবনের সাথে বর্তমান যুগের সভ্য ও সুশৃঙ্খল জীবনের পার্থক্যের কারণ হলো বিজ্ঞান।বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে জ্ঞান যার মাধ্যমে মানুষ জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছে।
বিজ্ঞানের পদযাত্রাঃ-
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই শুরু হয় পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে করে তোলার প্রয়াস।প্রাচীনকালে জীবনযাপনের এক পর্যায়ে মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কার করতে শেখে,শিকারের জন্য গাছের ডাল ও পাথর দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করতে শেখে।
আর তখন থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের পদযাত্রা।তারপর থেকে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে।যে পৃথিবী ছিল অপার বিস্ময় ও রহস্যের স্থান সে পৃথিবীকে মানুষ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে। বিজ্ঞানের বলে মানুষের কাছে অসম্ভব বলে আর কিছু নেই।
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানঃ-
প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর থেকে আমরা যেভাবে জীবন শুরু করি তার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ছায়াপাত রয়েছে।প্রতিদিন সকালবেলা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় সংবাদপত্র। যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের সব ধরনের ঘটনার খবর পায়।গ্রামীন জীবনের তুলনায় শহরের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া বেশি।
সকাল বেলার চা, নাস্তা, সারাদিনের খাবার তৈরির জন্য গ্যাস, স্টোভ, বৈদ্যুতিক চুল্লির দরকার হয়। খাবার গরম করার জন্য ওভেন,সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার। তবে বিজ্ঞানের প্রভাব এখন আর শহরেই সীমাবদ্ধ নয় গ্রামাঞ্চলেও এর প্রভাব ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে।
টেলিভিশন,রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি বিনোদনের অন্যতম উপায় এ ছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত টেলিফোন,মোবাইল, ইমেইল,ফ্যাক্স,বিভিন্ন যানবাহন বিজ্ঞানেরই আবিষ্কার।নিত্যনতুন আরো প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
প্রাচীন শিক্ষাপদ্ধতির তুলনায় বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে শিক্ষকরা চক, ডাস্টার,ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে মাল্টিমিডিয়া রুমে ক্লাস নিচ্ছেন। বর্তমানে অতিসূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে সহজেই করা যায়। টেলিভিশন, বেতার যেমন বিজ্ঞানের আবিষ্কার তেমনি শিক্ষার উপকরণ কম্পিউটারও বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার।
এটি শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে।শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজেরাই বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারছে যা পূর্বে কখনোই করা যেত না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিখ্যাত লেখকদের বই বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মুহূর্তের মধ্যে জানা যায়।
আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা যেমন পেয়েছে স্বস্তি ছাত্র-ছাত্রীরা হয়ে উঠেছে স্বনির্ভর। এই অবস্থাকে আরো গতিশীল করতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষাঃ-
বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে। কৃষিকাজে এখন আর কাঠের লাঙ্গল ব্যবহৃত হয় না, তার পরিবর্তে কলের লাঙ্গল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি দিয়ে জমি চাষের উপযুক্ত করা হয়। সেচ কাজের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত পাম্প ব্যবহার করা হয়।
কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন বীজ আবিষ্কারের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে। উন্নত মানের সময়োপযোগী এবং উচ্চ ফলনশীল জাত আবিষ্কারের ফলে সারা বছরই ধান শাকসবজি ফলানো সম্ভব হচ্ছে।
উপসংহারঃ-
উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞান শিক্ষা যতটা প্রসারিত হয়েছে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে তা সম্ভব হয়নি। জনবহুল এদেশের মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলেই দেশের উন্নতি চরম শিখরে পৌঁছাবে।
বিজ্ঞান শিক্ষাকে গ্রহণ করে একে বাস্তবায়ন করতে হবে বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রসমূহ যেমন নানাভাবে প্রসারিত হচ্ছে তেমনি এর ব্যবহারের দিকটা কেউ প্রাধান্য দিতে হবে কেননা বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের জীবনে আমল পরিবর্তন এনে দেবে।