বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা [Biggan Ashirbad Na Abhishap Eassy] – প্রিয় পাঠক-পাঠিকা বন্ধুরা এই আর্টিকেলে আমি তোমাদের সাথে ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ’ প্রবন্ধ টি অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছি। তোমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবন্ধটি যত্ন সহকারে পড়ে পরীক্ষায় জন্যে তৈরি করো যা তোমাদের ফুলমার্কস পেতে অবশ্যই সাহায্য করবে।তাহলে চলো বন্ধুরা দেখে নেওয়া যাক প্রবন্ধটি।
ভূমিকাঃ-
যে বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের সম্পর্ক, যার সাহায্য ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না হঠাৎ তাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কেননা বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ এ প্রশ্ন তোলা মানে বিজ্ঞানের কল্যাণ শক্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট জানতে চাওয়া।
মানবজীবনে যেকোনো সাফল্যের অগ্রগতিকে আশীর্বাদ বলে গণ্য করা যায়। বহুকাল আগে মানব সভ্যতার আদিযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস। থাকার মতো ঘর ছিল না।পশু মাংস, ফলমূল খেয়ে তাদের জীবনধারণ করতে হতো।আত্মরক্ষার অস্ত্র ছিল না। আগুন জ্বালানোর কৌশল ও তাদের অজানা ছিল। তখন মানুষের কাছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পন্ন রহস্যে ভরা ছিল।সেই তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের প্রকৃতিকে জয় করার সাধনা। আজ মানুষ বিশ্ববিজয়ী। মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধির সাধনে বিজ্ঞান এর অবদান অপরিসীম। কল্যাণময়ী বিজ্ঞানের এই বিপুল পরিমাণ শুভ দিক থাকা সত্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে পরমাণু বোমার দুর্ধর্ষ ধ্বংসলীলার দিকে তাকিয়ে কল্যাণকামী মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন বারবার জেগে উঠছে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?
মানব কল্যাণে বিজ্ঞানঃ-
বিজ্ঞান সাধনার মূলে রয়েছে মানবকল্যাণ। বিজ্ঞান বলে বলিয়ান মানুষ ছুটন্ত নদীর স্রোতকে বশীভূত করে তার অমৃত প্রবাহে উষর মরুভূমিকে করে তুলেছে সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা। সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর দূরতম ঘাটে নামিয়ে দিয়েছে পণ্য সামগ্রী।বিজ্ঞান তার চিন্তা -ভাবনা,কামনা -বাসনা প্রয়াস -প্রচেষ্টা কে হাতিয়ার করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ কেবল মর্তসীমার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নয় মহাকাশের নীল সীমান্ত অতিক্রম করে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যা প্রসারিত।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতায় সফল হয়েছে সবুজ বিপ্লব।শিল্পক্ষেত্রে যন্ত্রদানবের অসুরিক শক্তির প্রয়োগে সৃষ্টি হয়েছে এই বিপ্লব। কঠিন কঠিন অসুখ সব প্রায় সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হয়েছে।ইন্টারনেট ও দূরদর্শন দূরকে করেছে নিকট। বিজ্ঞানকে আমরা কোন সংশয়ের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করবো। বিজ্ঞানের ভালো অথবা মন্দ অর্থাৎ বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সেটা নির্ভর করে মানুষ বিজ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করছে তার ওপর।
বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলার কারণসমূহঃ-
বিজ্ঞান যখন মানব সভ্যতার সুস্থ জীবনযাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়,জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে নিয়ে আসে সংঘাত আর মৃত্যু, সুস্থ পরিবেশকে করে তোলে বিষাক্ত।একমাত্র তখনই বিজ্ঞানকে অভিশাপ বলে চিহ্নিত করা যায়। যেহেতু বিজ্ঞান কোন সচেতন বস্তু নয় তাই নিজের ইচ্ছে মত কিছু করবার ক্ষমতা নেই তার। বিজ্ঞানকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করব ঠিক সেই মতই তার ফল পাব সব কিছুরই ভালো-মন্দ দুটো দিক থাকে। বিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম কিছু নয়।
উপসংহারঃ-
বিজ্ঞান হল মানবজাতির হাতিয়ার। হাতিয়ার ব্যবহার করে ভালো বা খারাপ যে কোন কাজ ই করা যায়। আসলে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রয়োগ কর্তার মনোভাবের উপর। যেমন পরমাণু শক্তি ধ্বংসের কাজে না লাগিয়ে তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে। তাই বিজ্ঞানের উপর অহেতুক দোষ চাপানো ঠিক নয়। সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন।যতদিন পর্যন্ত না মানুষের খারাপ মনোভাব পরিবর্তিত করে বিজ্ঞান বলের অসদ ব্যবহার বন্ধ করে বিজ্ঞানকে মঙ্গলময় দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে ততদিন বিজ্ঞান সম্পর্কে এই প্রশ্নটি থেকেই যাবে যে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?