শিক্ষায় বিজ্ঞানের প্রভাব রচনা [Shikha Biggan er Ovab Essay]
ভূমিকাঃ-
বিজ্ঞান যেন আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ, যার দ্বারা অনায়াসে অসাধ্যসাধন করা যায়।আজকের যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ।আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান হলো বিশ্বস্ত সঙ্গী।কৃষি -শিল্প -চিকিৎসার পাশাপাশি শিক্ষাজগতেও বিপুল পরিবর্তন ও উন্নতি সূচিত হয়েছে বিজ্ঞানের কল্যাণে।
বিজ্ঞানের সাহায্যেই আমরা অজানাকে জেনেছি,অদেখাকে দেখতে সমর্থ হয়েছি।বিজ্ঞান দূরকে করেছে নিকট, পরকে করেছে আপন।
বিজ্ঞান কী?
‘বিজ্ঞান’ কথাটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান।নিরীক্ষণ ও পরীক্ষণের সাহায্যে স্থাপিত সুশৃঙ্খল যুক্তিপণ্য জ্ঞানের নামই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বলতে আমরা বুঝি সেই বিশেষ জ্ঞানকে যা আমাদের ঋদ্ধ করে, আমাদের কল্যাণ করে।
বিজ্ঞানবুদ্ধি মানুষকে নিয়ে যায় অন্ধকার থেকে আলোর পথে আর এই আলোর পথেই ঘটে আত্মজাগরণ।তথ্য থেকে সত্য উদ্ধার ও তথ্য দিয়ে সত্য যাচাই হল বিজ্ঞানের মূল কথা।এই বিজ্ঞানই প্রগতি তথা উন্নতির প্রধান হাতিয়ার।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
সুপ্রাচীনকালের গুরুকুল ব্যবস্থায় বা আশ্রমিক শিক্ষায় জ্ঞানের চর্চা অব্যাহত থাকলেও বিজ্ঞান সেখানে ততখানি জায়গা করে নিতে পারেনি। কিন্তু আধুনিককালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার শিক্ষার ক্ষেত্রেকে করেছে প্রসারিত।বিজ্ঞানশিক্ষা মানুষকে যুক্তিবোধ দিয়ে বিচার করতে শিখিয়েছে, শিখিয়েছে কুসংস্কার মুক্ত হতে।বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার শিক্ষাকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়।কেবল পুঁথিগত শিক্ষা নয়, শারীর শিক্ষা এবং ক্রীড়াশিক্ষার জগতেও আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য।
শিখন সামগ্রী নির্মাণে বিজ্ঞানের অবদানঃ-
আধুনিক শিক্ষার প্রধান উপকরণ হলো বই,যা বিজ্ঞানের প্রধানতম আবিষ্কার মুদ্রণযন্ত্রেরই দান। বর্তমানে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক নানা যন্ত্রপাতি পুস্তকনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত শিখনসহায়ক উপকরণ যেমন মডেল, গবেষণার যন্ত্রপাতি, প্রজেক্টার প্রভৃতি বিজ্ঞানের দানেই পরিপুষ্ট।বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্য শিক্ষাদানের বিপুল ব্যবস্থা শিক্ষার আঙ্গিনাকে প্রশস্ত করেছে।
শারীরশিক্ষা ও ক্রীড়াশিক্ষায় বিজ্ঞানঃ-
আধুনিক কালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রধান দুই অঙ্গ হল শারীরশিক্ষা ও ক্রীড়াশিক্ষা।শারীরশিক্ষার জগতে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত নানা যন্ত্রপাতি ও কৃৎকৌশল বিস্ময়কর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। সুস্থসবল শরীর গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিজ্ঞানসৃষ্ট যন্ত্রপাতির সাহায্য পাচ্ছে তা বলায় বাহুল্য।
অত্যাধুনিককালে শারীরশিক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জিমের ব্যবস্থা আসলে বিজ্ঞানকেই বরণ করে নেয়। এ ছাড়া বিজ্ঞানসৃষ্ট খেলাধুলার সাজ সরঞ্জাম ক্রীড়াশিক্ষার ক্ষেত্রেও যুগান্তর সৃষ্টি করেছে।
দূরশিক্ষণে বিজ্ঞানের অবদানঃ-
বর্তমানে ডিসটেন্স এডুকেশন বা দূরশিক্ষণের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য।বিজ্ঞানের দৌলতে আজ ঘরে বসেই আমরা বহুদূর থেকে আগত পড়াশোনার উপকরণ গুলি সহজেই হাতে পেয়ে যাচ্ছি এবং উপযুক্ত শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে তোলার সুযোগ পাচ্ছি।
যন্ত্রবিদ্যা,চিকিৎসাবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যাশিক্ষায় বিজ্ঞানঃ-
কারিগরি শিক্ষা,বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান স্বীকৃতির অপেক্ষা রাখে না।
নানাধরনের উন্নত মানের যন্ত্রপাতি, ইন্টারনেট, এক্সরে, শল্যচিকিৎসার অত্যাধুনিক নানা উপকরণ আজকের কারিগরিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যাকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। শুধু তাই নয় কৃষিবিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান যে যুগান্তর সৃষ্টি করেছে সেকথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
উপসংহারঃ-
যে আগুনে আরতীর ও পঞ্চপ্রদীপ জ্বালানো হয় সেই আগুনেই আবার মানুষের ঘর পোড়ানো হয়। ঠিক তেমনিই যে বিজ্ঞান সুশিক্ষার বাহন তাকেই কুশিক্ষার ইন্ধনদাতা রূপেও কাজে লাগানো যায়।
এর জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে, হতে হবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন। কুশিক্ষার জগৎ থেকে বিজ্ঞানকে সরিয়ে এনে স্থাপন করতে হবে সুশিক্ষার অঙ্গনে।আর তাতেই বিজ্ঞানের যথার্থ সার্থকতা।