নুরজাহান চক্র কী? Noorjahan Chokro টীকা লেখো । (সহজ সরল ভাষায় লেখা)

নুরজাহান চক্র কী? Noorjahan Chokro টীকা লেখো । (সহজ সরল ভাষায় লেখা)

ভাইবোনেরা আমরা নুরজাহান চক্র টিকাটি একদম সহজ সরল ভাষায় প্রস্তুত করেছি, আসা করা যায় মাত্র একবার পাঠ করলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি আপনারা আয়ত্ত করতে পারবেন। এটাও আসা করা যায় আপনারা যদি এই টিকাটি নিজের ভাষায় বুঝে পরীক্ষার খাতায় লিখে আস্তে পারেন তবে আপনি এর সর্বোচ্চ মান টি পেতে পারেন।

নুরজাহান চক্র কী? Noorjahan Chokro টীকা লেখো । (সহজ সরল ভাষায় লেখা)

তবে চলুন দেখে নেওয়া যাক Noorjahan Chokro টিকাটি। নিচে সম্পূর্ণ বিষয় টি স্থাপন করা হয়েছে।


নুরজাহান চক্র আসলে কি?

নুরজাহান হলেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। এক সময় জাহাঙ্গীর প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্যের ক্ষমতার হাল ধরেন তার 20 তম স্ত্রী মেহেরুন্নেসা ওরফে নুরজাহান। অসুস্থতার সময়ে নূরজাহান বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হন এবং ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এই সময় তাকে সাহায্য করেছিলেন পিতা মির্জা গিয়াসবেগ, মেজ ভাই আসোফ্ খাঁ, শাহজাদা খুরম অর্থাৎ শাহজাহান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি মহাবাত খাঁ। এনারা সকলেই নুরজাহানের উত্থানে বিশ্বের সহায়তা করেছিলেন তাই এদের একত্র সমন্বয় কে নূরজাহান চক্র নামে আখ্যায়িত করা হয়।

মেহেরুন্নেসা থেকে নূরজাহান হয়ে ওঠার গল্প।

১৮ বছর বয়সে মেহেরুন্নেসার বিবাহ হয় আলী কুলি বেগ নামে এক মুঘল মনসবদারের সঙ্গে। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আলীকুলি বেগের দ্বন্দ্বে আলিকুলি বেগের প্রাণ সংঘাত হয়, এবং জাহাঙ্গীর ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে 25 মে তার মেহেরুন্নিসা তথা নুরজাহানকে বিবাহ করেন। এরই সাথে সাথে তিনি তার 12 জন বেগমের মধ্যে নূরজাহানকে প্রধান বেগম হিসাবে আখ্যা দেন। নুরজাহান কথার অর্থ হলো জগতের আলো। এখন আমাদের আলোচনার বিষয় নুরজাহান নিজ সাম্রাজ্যের কতটা আলোক বিস্তার করতে পেরেছিলেন।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন নুরজাহানের জন্যই জাহাঙ্গীরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। পরবর্তী জীবনে জাহাঙ্গীর নিজেকে সংযমী করে তোলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় প্রতিষ্ঠিত করে সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দান করে এবং দুঃখী দুর্দশা গ্রস্থ মানুষদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন।

ধীরে ধীরে জাহাঙ্গীরের অসুস্থতা ও মৃত্যুর পথে ঢলে পড়ার সময় পর্যন্ত নুরজাহান মুঘল সাম্রাজ্যে এক বিশেষ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বলা চলে এই সময় তিনি প্রশাসনের প্রধান পরিচালক এবং নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। এই সময় নুরজাহান তার নিকটজনদের নিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী গঠন করেন যেটি নুরজাহান চক্র নামে পরিচিত।

প্রথমাবস্থায় জাহাঙ্গীরের বিলাস পূর্ণ জীবন অমর প্রমোদ মদ্যপান বিলাস ও বিলাস এবং পরবর্তীতে তার তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে নুরজাহান ও নিকটবর্তী চক্র কারীরা ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যায়। নিকটবর্তী নুরজাহান চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন উচ্চ রাজপদ গ্রহণ করেন। যেমন নুরজাহান পিতা মির্জা গিয়া আসবে ও তার দুই ভাই আসিফ খা ও ইদমত খা মুঘল দরবারের বিশেষ পদে উপনীত হয়। তারপর আসফ খাঁ প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন এবং নুরজাহান সিংহাসনে চালিকাশক্তি হিসাবে নিজেকে উপনীত করেন।

জাহাঙ্গীরের শক্তির হ্রাস ও পতনের কারণ।

জাহাঙ্গীরের পতনের কারণ এর পিছনে বেশ কয়েকটি উজ্জ্বল কারণ রয়েছে যেমন তার বিলাসবাহুল জীবন পত্নীর প্রতি অন্ধ ভালবাসা। পত্নীর কথা অনুযায়ী কাজ করা এইসব। এক জায়গায় জাহাঙ্গীর নিজেই বলেছেন “এক পেয়ালা সুরার বিনিময়ে আমি আমার রাজ্য আমার প্রিয়তমা রানীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি

নুরজাহান চক্রের পতন।

1) নুরজাহান তার প্রথম পক্ষের কন্যা লাডলি বেগমকে জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ার সঙ্গে বিবাহ দেন। পরে শাহরিয়াকে দিল্লির সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করেন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে খুররম খা নুরজাহান চক্র পরিত্যাগ করেন।

২) সমস্ত দিক যখন অগোছালো নুরজাহানের ক্ষমতা অনেকটাই শিথিল এমন সময় খুররম খাঁ নুরজাহান কে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং পিতাকে কারাগারে বন্দী করে নিজেই দিল্লির সিংহাসনে বসেন এইভাবে সমাপ্তি হয় নুরজাহান চক্র।

৩) খুররমের আদেশ অনুসারে নুরজাহান বাকি জীবনটা কারাগারে বন্দী হয়েই কাটান। বন্দি অবস্থায় তিনি পিতার সমাধির কাজকর্ম দেখাশোনা করেছিলেন। কখনো আবার পার্সি ভাষায় কবিতা লিখেও দিন অতিবাহিত করেছেন। এইভাবে চলতে চলতে অবশেষে ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৭ ই ডিসেম্বর নূরজাহান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যু হলে লাহোরের শাহদারা বাগে জাহাঙ্গীরের কবরের পাশেই তার সমাধি স্থাপন হয়।

নুরজাহানের জীবনের কৃতিত্ব ও ব্যাপ্তি বিস্তার।

১) মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তিনি মহল সাম্রাজ্যের সম্রাটের স্ত্রী হয়ে এলেও অন্যান্য স্ত্রীদের থেকে তিনি ছিলেন অনেক বুদ্ধিমতী ক্ষমতাশীল ও নিষ্ঠতার এক ব্যতিক্রম মহিলা।

২) তিনি মাত্র কুড়ি বছর বয়সে বিবাহ করে মুঘল সাম্রাজ্যের হাল সঠিকভাবে নিতে পেরেছিলেন যা জাহাঙ্গীরের অন্যান্য স্ত্রীরা করতে সক্ষম হয়নি।

৩) নিজ শক্তি বলে তিনি নুরজাহান চক্র তৈরি করেছিলেন যা ছিল তার অন্যতম সৃষ্টি। এই চক্রের প্রভাবে তিনি তার রাজ্যের প্রত্যেকটি মানুষের দুঃখ দুর্দশা দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে পারতেন।

৪) মধ্যযুগে নারী হয়েও তিনি যেন এক আধুনিক যুগের স্বাধীনচেতা উচ্চ মানসিকতার পরিচয় বহন করেন। দেখা গেছে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার ক্ষেত্রে বহু পুরুষ ও রাজশক্তিকে ও হার মানায়।

৫) জাহাঙ্গীরের আমলে রাজ্যে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করে নুরজাহান সাম্রাজ্যকে আরো সবল করে তোলেন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

Leave a Comment