ভূমিকাঃ-
একটি গ্রামের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা [Ekti Gramer Attokotha Essay] – ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্য হলো এই পশ্চিমবঙ্গ আর আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে যে হাজার হাজার গ্রাম আছে আমি হলাম সেই ধরনের একটি অখ্যাত গ্রাম। কথায় আছে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কান্ট্রি বা গ্রাম আর মানুষ সৃষ্টি করেছে town বা শহর। এই সূত্র থেকেই বলা যায় মানুষের আগ্রহে অনেক গ্রাম আজ শহরের পরিণত হয়ে গেছে।
কিন্তু সৌভাগ্য হোক বা দুর্ভাগ্য আগে যেমন গ্রাম যেমন গ্রাম ছিলাম এখনো সেই রকমই একটি গ্রাম হয়ে আছি।একসময় এখানকার পুকুর বা ডোবায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বিশেষ করে যা পাওয়া যেত তাহল চিংড়ি মাছ আর সেই সূত্র ধরেই আমার নাম হয়েছে ‘চিংড়িপোতা’
গ্রামের অবস্থানঃ-
শুনেছি শহর কলকাতার গায়ে রয়েছে ট্যাংরা,তপসে, বাগদা,ভাঙ্গর ইত্যাদি নামের বহু জনপদ। মাছের নামে এদেরও নাম। এগুলো একসময় গ্রাম ই ছিল। এখন এরা কলকাতার সঙ্গে মিশে শহর হয়ে গেছে।আমার কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। হাজার বারোশো মাটির ঘর, আড়াইশো পাকা বাড়ি আর হাজার ছয়ের লোক সংখ্যা নিয়ে আমি রয়ে গেছি ধু-ধু মাঠের মাঝে।পথ ঘাট কাঁচা,বর্ষায় কাদা এবং সেই এই পথ গ্রীষ্মে ধুলোয় পরিপূর্ণ থাকে।
তা রাস্তাঘাট যেমন তেমন হোক না কেন আমার ভিতর রয়েছে বিস্তর সবুজ গাছপালা। রয়েছে অজস্র পাখির কলকাকলি। ফিঙ্গে থেকে কাক কোকিল, টিয়া কোনটারই অভাব নেই এই চিংড়ি পোতায়।এখানকার অধিবাসীরা পাখির টাকে ঘুমিয়ে পড়ে আবার পাখির ডাকে জেগে ওঠে। আমার বুকে তারা শান্তিতে মিলে মিশে জোটবদ্ধ হয়ে বসবাস করে।
গ্রামের উন্নতিঃ-
আমার এলাকায় রাস্তাঘাটের তেমন সুবন্দোবস্ত না থাকলেও ধীরে ধীরে আমার এলাকার বেশ কিছু উন্নতি চোখে পড়েছে।আগে সারা বছর আমার এলাকার মাঠগুলিতে বছরে একবার করে চাষ হতো।
খাল কাটার ফলে গত ৪৫-৫০ বছর ধরে এখানে দুইবার করে চাষ হচ্ছে।সেচের এই ব্যবস্থার ফলে ধান গম আলু ইত্যাদির ফলন যথেষ্ট ভালো। আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাষবাস করতে হতো, এখন তা আর হয় না।গ্রামের লোকেদের সাংসারিক অবস্থা বেশ ভালই হয়েছে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গ্রামে চালু হয়েছিল একটি ছোট্ট প্রাইমারি স্কুল। বছর ১৫ হলো এখানে একটি আট ক্লাসের জন্য স্কুল খুলেছে। গ্রামের দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখানেই পড়াশোনা করে। সাইকেল চেপে উঁচু ক্লাসের ছেলেরা গ্রাম থেকে অনেক দূরে পড়তে যায়।গাঁয়ে একটি পোস্ট অফিসও রয়েছে।ফোনের লাইন ও রয়েছে যদিও বর্তমান সময়ে এখন অধিকাংশ মানুষের হাতেই স্মার্ট ফোন আছে।
গ্রামের সংস্কৃতিঃ-
চিংড়িপোতা গ্রামের লোকেরা আমোদ -আহ্লাদ করতে ভালোবাসে। আগে পাল্লা দিয়ে দুটি দুর্গাপূজা হত এখন ছটি হয়। কালীপুজো হয় দশটি। পুজোর সময় বসত যাত্রার আসর। শীতকালে হতো পালাকীর্তন এখনো তা হয়। ইদানিং গ্রামে ইলেকট্রিক লাইন এসেছে। এসেছে রেডিও এবং দূরদর্শন। সন্ধ্যাবেলায় কাজকর্মের শেষে সকলেই টিভির বসে পরত। গ্রামের একটি বিশেষ পুজোতে একটি বড় ধরনের মেলা বসে যেখানে হাজার হাজার মানুষের মিলন ঘটে।
উপসংহার – শান্তির নীড়ঃ-
চিংড়িপোতা গ্রামটিতে যারা বসবাস করে তারা খুবই সরল সাদাসিধে মানুষ। এখানে চাকরিজীবী মানুষ নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজ কিংবা কোন ছোটখাটো দোকান খুলেছে তা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন।
ধান- চালের কারবারও অনেকে করে থাকে এই গ্রামে জাতপাত নিয়ে তেমন কোনো ভেদাভেদ নেই বিরোধ নেই হিন্দু-মুসলমান সবাই ভাই ভাই হয়ে বসবাস করে। সকলেই নিজের নিজের ধর্ম শান্তিতে পালন করে থাকে। মন্দিরের সন্ধ্যার আরতি ঘন্টার ধোনির সঙ্গে মসজিদে আজান শোনা যায়।
আরো কিছু পরে দূরে জঙ্গল থেকে ভেসে আসে অসংখ্য শিয়াল এটা অন্ধকার ফুড়ে ! চাঁদ ওঠে আকাশে। গ্রাম চিংড়িপোতা এরপর নিশ্চিন্তে নিদ্রায় চলে যায়।