একটি বট গাছের আত্মকথা [Ekti bot Gacher Atmakatha Essay + PDF]
ভূমিকাঃ-
তোমরা মানুষ কত সুখী সখীর হাসো আবার দুঃখে কাঁদো অবাধ তোমাদের গতি প্রতিবাদী তোমাদের কন্ঠ কিন্তু আমি এসবের কিছুই পারি না অথচ তোমাদের মত আমারও প্রাণ আছে জন্ম মৃত্যু ও আছে কিন্তু আমি আমার মনের কথা বলতে পারি না তাই তোমরা আমার কথা জানো না একদিন তোমাদের কত স্নেহ মমতার প্রতিপালন করেছি তোমাদের থেকে আমরা আগে পৃথিবীতে এসেছি আমরাই আদি প্রাণ মৃত্তিকার বীর সন্তান হ্যাঁ আমি বৃক্ষ সমাজের একজন আমি বদনামেই পরিচিত।
আমার শৈশবঃ-
আমি আজ বৃদ্ধ তবে এক সময় আমারও সেই সব ছিল ছোটবেলায় ভয়ে ভয়ে আমার দিন কাটতো মাঝে মাঝে আজ তো ঝড় আছে পড়তো আমাদের উপর। ঠাক করে কাঁদতাম আমি লোকাল এটা ছিল দূরে এঁকেবেঁকে পথ চলে গেছে। আমার সামনের পথ দিয়ে কত লোকের আনাগোনা। তাদের কথা শুনতাম আমি দিনের আলো ফুটলে যেমন থাকতো চঞ্চল্য রাত হলে তেমনি নেমে আসত এক নিস্তব্ধতা তখন তিনটাই ছিল অন্যরকম
আমার যৌবনঃ-
ধীরে ধীরে আমি বড় হতে থাকলাম কৈশরের শেষে এলো আমার যৌবন আমার তখন ডালে ডালে পাতায় পাতায় এক নতুন শিহরণ নতুন উন্মাদনা দুর্বার প্রাণশক্তি আমার মধ্যে ঝড়ের দাপট আমার কাছে প্রতিহত হয়ে ফিরে যায়
আমি তখন ভয়ংকর কিন্তু তোমাদেরকে আমার বড় ভয় তোমাদের হাতে কঠিন অস্ত্র আঘাত পড়লো গাছ গাছালের উপর হাহাকার উঠলো বনে বনে কিন্তু তোমরা শুনতে পেলে না তখন থেকে আমার কাছে মানব কেউ দিচ্ছে ধর না মাঝে মাঝে বসছে মেলা আমাকে দেবতা ভেবে দলে দলে আসতে লাগলো লাখো লাখো মানুষ জমে উঠল রহস্য ভরা হিসাব দিন যা সত্যি আমাকেও অবাক বানিয়ে তুলতো
আমার বার্ধক্যঃ-
এইভাবে সময় যেতে লাগলো তিন মাস বছর ধীরে ধীরে অতিক্রান্ত হল তোমাদের হাতে বনানী নিঃশেষ হল গড়ে উঠলো লোকালয় তৈরি হল রাস্তা শুরু হল যানবাহন চলা আমি রয়েছি একা তবে এখনো মেলা বসে কিন্তু প্রাণের ছোঁয়া যেন কোথায় হারিয়ে গেছে কম আমার ডালপালাও তোমরা কেটে দিয়েছো। আমার ব্যথার কথা কেউ জানে না আমার বুকের দীর্ঘশ্বাস কেবল আমি অনুভব করি
মানুষের উপকারঃ-
আমার মনে জাগে তোমাদের কথা তোমরা কেন এত নির্মম প্রশ্ন জাগে তোমাদের মনে কেন ধ্বংসের নেশা তোমরা কি আমাদের উপকারের কথা ভুলে গেছো তোমাদের জন্য আমরা তো নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি।
বাতাসের বিষাক্ত বিষ পান করে তোমাদের জন্য অমৃত সঞ্চয় করে রাখি তোমাদের আশ্রয় দিয়েছে ভয় কাটিয়েছি তোমাদের জন্য আমাদের প্রাণ উৎসর লিখিত আমাদের তোমরা একটুও ভালবাসতে পারো না
উপসংহারঃ-
এখন আমার বয়স হয়েছে কতদিন আর বেঁচে থাকবো তাও জানা নেই তোমাদের নির্মমতায় প্রিয়জন অনেকেই অকালে চলে গেছে। তবে এইটুকু বলার আমাদের শক্তিতেই তোমাদের শক্তি আমাদের জন্যই তোমরা বেঁচে রয়েছো আমরা আদি প্রাণ আমরাই প্রথম পাষাণের বুকে আলোর বন্দনা মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলাম তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের নির্মমতার জন্য অনুশোচনা করবে আমার ধারণা তোমাদের ভুল ভাঙবেই তবে জানিনা আমি এতদিন বেঁচে থাকবো কিনা