দূরদর্শনের ভালোমন্দ রচনা [Doordarshan Er Valo Mondo Essay]
ভূমিকাঃ-
দূরদর্শন হল আমাদের কাছে মহাভারতের সঞ্জয়ের দিব্যদৃষ্টি। দূর আর দূর নেই। ঘরে শুয়ে বা বসে দূরের জিনিস দর্শন এবং শ্রবণ উভয়ই আজ একসঙ্গে সম্ভব বিজ্ঞানের জয়যাত্রার কল্যাণে।
আবিষ্কারঃ-
এই দৃশ্যশ্রাব্য যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ যার অর্থ দূর আর ল্যাটিন শব্দ ‘ভিসিও’ যার অর্থ দৃশ্য।
একসঙ্গে টেলিভিশন শব্দের অর্থ হলো দূরকে যা দৃশ্যমান করে। আমাদের দেশে টেলিভিশনের প্রচলন হয় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে কিন্তু কলকাতায় এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই আগস্ট।
দূরদর্শনের ইতিবাচক দিকঃ-
আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হল দূরদর্শন। অবসর বিনোদন থেকে শুরু করে শিক্ষামূলক কৌতূহল নিরসন সমস্তটাই সম্ভব দুরদর্শন এর মাধ্যমে। ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে দূরদর্শন যুগান্তর সৃষ্টি করেছে বলা চলে। কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন উচ্চফলনশীল বীজ সংক্রান্ত আলোচনা,সেচের পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় দূরদর্শনের মাধ্যমে।
ছাত্র-ছাত্রী বা পড়ুয়াদের সহায়তা করার জন্য দূরদর্শন এর মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয় দেশ-বিদেশের নানা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, নানা দেশের জীবজন্তু, পশু পাখি, প্রাচীন সভ্যতা ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহান্বিত করে এবং তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত করে।
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যবিষয়ে মানুষকে, তথা দেশকে সচেতন করার প্রধান মাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশের সরকার ব্যবহার করে থাকে দূরদর্শনকে। কারণ বর্তমান সময়ে দুরদর্শন এর প্রসার সর্বত্র। প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জেও এখন দূরদর্শন পৌঁছে গিয়েছে। তাই দ্রুত মানুষের মধ্যে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্ক সচেতনতা আনতে দূরদর্শনই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সারাদিনের ব্যস্ততার পর আধুনিক মানুষের জীবনে অন্যতম প্রধান বন্ধু হিসেবে অপেক্ষা করে থাকে দূরদর্শন। খেলা,সিনেমা নাটক,সিরিয়াল ইত্যাদির ডালি নিয়ে দূরদর্শন মানুষের জীবনকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টায় সর্বদা রত থাকে।প্রায়ই দেখা যায় খেলা প্রিয় মানুষের কাছে রাতদিনের ব্যবধান মুছে দিয়ে দূরদর্শন প্রদান করেছে উত্তেজনাপূর্ণ অপার আনন্দ।
দূরদর্শনের মন্দ দিকঃ-
দূরদর্শন দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যম হওয়ায় যন্ত্রটি আমাদের মানসিক ভাবনা-চিন্তার ক্ষমতাকে হ্রাস করে তাই এর অন্য নাম ‘বোকা বাক্স’ বা ‘ইডিয়েট বক্স’।
বিজ্ঞানের আশীর্বাদরূপে আমাদের সামনে এটি উপস্থিত হলেও মানুষেরই দুর্বুদ্ধি কখনো কখনো একে অভিশপ্ত মূর্তিতে দাঁড় করায়। নিঃসঙ্গ মানুষকে দূরদর্শন আনন্দ দান করেছে, দান করেছে সঙ্গ একথা ঠিক হলেও পাশাপাশি তা মানুষকে অনেকাংশে করে তুলেছে অসামাজিক। মানুষ তার মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছে তা নয়, আধুনিক যুবশক্তি প্রায় এর ক্রীড়নকে পরিণত।
ভোগবাদ, হিংসা এখন মানুষের একমাত্র লক্ষ্য। নাগরিক মানুষের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জের মানুষের মধ্যেও যেটুকই আন্তরিকতা, সামাজিকতা অবশিষ্ট ছিল আজকাল সেটুকুও অবলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে দুর্ধর্ষণের মনোগ্রাহী সিরিয়ালের প্রভাবে।
এখন আর তাদের পাড়াপড়শির খোঁজ নেওয়ার সময় নেই, মানুষের বিপদ আপদ দেখার সময় নেই,আত্মীয়তা করার, কুটুম্বতা পাতানোর সময় নেই।কাজের শেষে অবসর সময়টুকুতে তাদের সঙ্গী দূরদর্শন।দূরদর্শন মানুষের রুচিকে নষ্ট করছে নানা রুচিহীন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। শুধু তাই নয় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠের আগ্রহ কমিয়ে দূরদর্শন তার রঙিন আকর্ষণ ছড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতিসাধন করছে।আজ সমাজে অপরাধপ্রবণতা এত বাড়ার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী দূরদর্শন।
উপসংহারঃ-
দূরদর্শনকে আধুনিক জীবনযাপনে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়।তার কল্যাণকর প্রভাবটাই যাতে জনমানসে পৌঁছায় সেদিকে সরকারি ও বেসরকারি দূরদর্শন কেন্দ্রগুলিকে সচেতন থাকতে হবে। বিজ্ঞানের এই দান সকল মানুষের মধ্যে যাতে কল্যাণবাণী বহন করে আনে সেদিকে লক্ষ্য রাখা মানুষেরই কর্তব্য।