তোমার প্রিয় লেখক প্রবন্ধ রচনা [Tomar Priyo Lekhok Essay]

তোমার প্রিয় লেখক প্রবন্ধ রচনা [Tomar Priyo Lekhok Essay] – এই আর্টিকেলে বাংলা প্রবন্ধ রচনার একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘তোমার প্রিয় লেখক’ প্রবন্ধ টি অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যদি তোমরা প্রথম থেকে শেষ যত্ন নিয়ে পড়ে এটি তৈরি করো তাহলে অবশ্যই তুমি ফুলমার্কস পাবে।

তোমার প্রিয় লেখক প্রবন্ধ রচনা [Tomar Priyo Lekhok Essay]

একদিন পাঠাগারে গোয়েন্দা গল্পের বই খোঁজ করতে গিয়ে লাইবেরিয়ান আমার হাতে তুলে দিলেন একটি ব্যোমকেশের গল্প। লেখকের নাম শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর আগে অন্য লেখকের বহু গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি কিন্তু শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বইটি পড়ে আমি সন্তুষ্ট হলাম বইটি ফেরত দিতে গিয়ে লাইব্রেরিয়ান এর কাছে জানতে পারলাম এই লেখকের আর কোন গোয়েন্দা কাহিনী পাওয়া যাবে কিনা তিনি উত্তর দিলেন তবে এবার নিয়ে যাও এই লেখকেরই একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস তিনি আমার হাতে দিলেন ‘তুঙ্গ ভদ্রার তীরে’

বইটি ইতিহাস আশ্রিত কাহিনী যে কত জীবন্ত কত মনোহর হয়ে উঠতে পারে সেই প্রথম তা অনুভব করলাম কৌতুহলী হয়ে উঠলাম এই লেখক সম্পর্কে যার গোয়েন্দা কাহিনী এত ভালো তিনি আবার এত ভালো ঐতিহাসিক কাহিনী লিখতে পারেন পড়তে শুরু করলাম শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় লেখালেখি তিনি হয়ে উঠলেন আমার সবচেয়ে পছন্দের প্রিয় লেখক।

জীবনকথাঃ-

আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক এর জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে মার্চ, উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর শহরে। পিতার নাম তারাভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মাতা বিজলিপ্রভা দেবী। তার বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত হয় বিহারের মূল্পের শহরে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মুঙ্গের জেলা থেকে মেট্রিক পাস করে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। তিনি বি.এ. পাস করার পর পাটনা থেকে আইন নিয়ে পাস করেন। শরবিন্দু ওকালতি শুরু করলেও বেশিদিন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি।

ওকালতি ছেড়ে তিনি সাহিত্যকেই জীবিকা হিসেবে নির্বাচন করে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বোম্বে টকিজের আহবানে সিনারিও লেখার কাজ নিয়ে মুম্বাই যাত্রা করেন। বোম্বে টকিজের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তিনি আচারিয়া আর্ট প্রোডাকশনে যোগ দেন এবং সেখানে দীর্ঘ আট বছর বছর কাজ করেন।

তারপর থেকে শরবিন্দু স্বাধীনভাবে সিনারিও কাজ করতেন তবে এই কাজে তার সাহিত্যচর্চার ক্ষতি হচ্ছিল বলে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সিনেমার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে পুণায় বসবাস শুরু করেন এবং পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন সাহিত্য চর্চায়। শরবিন্দুর শেষ জীবন ও সেখানেই অতিবাহিত হয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ৯ই জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন

সাহিত্যকীর্তিঃ-

শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পকার হিসেবে খ্যাত হলেও তার প্রথম প্রকাশিত বইটি সাহিত্যকৃতি একটি কবিতা সংকলন।বইটির নাম ‘যৌবনস্মৃতি’। এরপর অবশ্য তিনি আর সেভাবে কবিতা চর্চা করেননি।গদ্য রচনাতেই মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন।

তার প্রথম প্রকাশিত গল্প গ্রন্থ ‘জাতিস্মর’ ঐতিহাসিক গল্পের একটি আদর্শ সংকলন।ইতিহাস অবলম্বনে তিনি বেশ কয়েকটি গল্প রচনা করেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রক্তসন্ধ্যা’, ‘মৃৎ প্রদীপ’, ‘বিষকন্যা’ প্রভৃতি এছাড়া পাঁচটি ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেছিলেন সেগুলি হল ‘কালের মন্দিরা’ ‘গৌড়মল্লার’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’, ‘কুমার সম্ভবের কবি’, ‘তুঙ্গ ভদ্রার তীরে’ গোয়েন্দা কাহিনীতেও তিনি তার চমক দেখিয়েছেন যেমন ‘ব্যোমকেশের ডায়েরী’, ‘ব্যোমকেশের গল্প’ ‘দুর্গরহস্য’ ‘আদিম রিপু’, ‘সজারুর কাঁটা’ প্রভৃতি এছাড়াও সামাজিক গল্প, ভূতের গল্প, নাটক ও কিশোর সাহিত্য রচনা তেও তিনি দক্ষ ছিলেন।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ উপন্যাসটির জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনি শরৎ স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হন।

উপসংহারঃ-

এই শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক। তাঁর রচনাবলী আমার অবসর সময়ের সবচেয়ে সঙ্গী।

তার গোয়েন্দা গল্পের ঘটনাগুলি দুর্ধর্ষ সেই সঙ্গে ইতিহাস আশ্রিত কাহিনী গুলি ও রোমাঞ্চকর সেগুলি পড়তে পড়তে আমি কখনো চলে যাই কালিদাসের কালে।শরবিন্দুর স্বচ্ছ সাবলীল অথচ লাবণ্যময় ভাষা ভঙ্গিতে আমি অনুভব করি অদ্ভুত এক তৃপ্তি।

Leave a Comment