নামাজ শিক্ষা
নামাজ শিক্ষা – পাঁচ নামাজ পরার নিয়ম ও দুয়া [Namaj Shikkha]
নামাজঃ– নামাজ হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। নামাজ পডতে গেলে অজু ও গোসলের একান্ত প্রয়োজন। কারণ দেহ পাক-সাফ না থাকলে কোন প্রকার ইবাদত-বন্দেগী করা চলে না। অজু এবং গোসল দ্বারা অঙ্গ শুদ্ধ করতে হয়। অজু গোসলের জন্য পানি আবশ্যক।
উচ্চারণঃ- নাওয়াইতুল্ গুস্লা লি-রাফ্য়িল জানাবাতি।
অর্থঃ- নাপাকি দূর করবার জন্য গোসলের নিয়েত করছি।
গোসলে ফরজ তিনটিঃ-
- কুল্লি করা
- নাকের ভিতর পানি দেওয়া,
- সর্বশরীর উত্তমরূপে ধোওয়া স্ত্রীলোকের গহনা পরিধান ছিদ্রে এবং তার নীচে পানি প্রবেশ না করলে গোসল সিদ্ধ হবে না।
গোসলে সুন্নত ছয়টিঃ-
- দুই হাত ধোয়া
- শরীরের নাপাকি ধুয়ে ফেলা
- লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলা
- সর্বশরীর তিনবার ধোয়া
- অজু করা
- গোসল শেষ হলে অন্য স্থানে গিয়ে পা ধোয়া।
গোসল করিবার প্রণালীঃ-
প্রথমত নিয়েত করতে হবে, তারপর উভয় হাত কব্জী পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে,তারপর লজ্জাস্থান ধুতে হবে।শরীরের অপর কোন জায়গায় কোনপ্রকার নাপাকী থাকলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।তারপর অজু করতে হবে কিন্তু পা ধোওয়ার আবশ্যকতা নেই। তারপর ডান ও বাম কাঁধে তিনবার পানি ঢালতে হবে।তারপর মাথায় ও সর্বশরীরে তিনবার পানি ঢালতে হবে। গোসল করা শেষ হলে অন্য জায়গায়
গিয়ে পা দুটো ধুয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু চৌকি বা কোন উঁচু জায়গায় বসে গোসল করলে সেইখানে বসে পা ধুলেই হবে।
অজুঃ-
শরীরকে পবিত্র করতে হলে শরিয়তের বিধান মতে হাত,পা এবং মুখ ধোয়াকেই অজু বলে।অজুর স্থানের একটি লোমও শুকনো থাকলে অজু হবেনা।।
অজুর নিয়েতঃ-
উচ্চারণঃ- নাওয়াইতু আন্ আতাওজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি অ-ইসতিবা হাতিস্ সালাতি তাকাররুবান ইলাল্লাহি তায়ালা।
অর্থঃ- নাপাকি দূর করবার ও নামাজ পড়বার এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভ করবার জন্য অজু করছি।
অজু করিবার প্রণালীঃ-
অজু করবার সময় ‘সতর’ ঢাকা দিয়ে সামান্য উঁচু জায়গায় কিবলামুখী হয়ে বসবে। পুরুষের নাভীমূল থেকে হাঁটুর নীচু পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকদের মুখ, হাত এবং পায়ের পাতা ছাড়া সর্বশরীরকে ‘সতর’ বলে।
১। তারপর অজুর নিয়েত করে ‘বিস্মিল্লাহ্’ পড়ে প্রথমে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত পরে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে।
২। মেসওয়াক করতে হবে বা মেসওয়াক না করলে আঙ্গুল দ্বারা দাঁত ঘষে নিতে হবে। তারপর গড়গড়াসহ তিনবার কুল্লি করতে হবে। রোজাদারের গড়গড়া করা নিষেধ।
৩। ডান হাত দ্বারা তিনবার নাকে পানি প্রবেশ করাতে হবে তারপর বাম হাত দ্বারা ঝেড়ে ফেলতে হবে।
৪। কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া পর্যন্ত মুখমণ্ডল তিনবার ধুতে হবে। ঘন দাড়ি থাকিলে নীচের দিক থেকে আঙ্গুল প্রবেশ করে খেলাল করবে।
৫। বাম হাত দ্বারা ডান হাতের কনুইর উপর পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে এবং ডান হাত দ্বারাও বাম হাতকে একই প্রকারে ধুতে হবে। উভয় হাতের মধ্যমা, অনামিকা এবং কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা কপালের
উপর থেকে মাথার শেষ পর্যন্ত মুসাহ করতে হবে। তারপর উভয় হাতের তালু দ্বারা ঘাড়ের দিক থেকে মস্তকের উভয় দিক মুসাহ করতে হবে।
৬। সেই ভিজা তর্জনী আঙ্গুল দুই কানের ভিতর প্রবেশ করে বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা উভয় কানের পৃষ্ঠ মুসাহ করিবে। হাত দুটির আঙ্গুল পৃষ্ঠ দ্বারা ঘাড় মুসাহ করতে হবে।তারপর পাঞ্জা ধরার মত দুই হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল প্রবেশ করে খেলাল করতে হবে।
৭। বাম হাত দ্বারা উভয় পায়ের গিঁট পর্যন্ত যথাক্রমে তিনবার ধুতে হবে।অজু শেষ হলে অজুর অবশিষ্ট পানি সোজা হয়ে একটু খেতে হবে।
নামাজ পড়িবার নিয়মঃ-
নামাজ পড়বার আগে অবশ্যই গোসল এবং অজু করে নেওয়া ফরজ। পরিধান করা পোশাক পবিত্র হওয়া এবং সতর ঢাকা ফরজ।অজু করে পাক কাপড় দ্বারা সতর ঢেকে জায়নামাজে
দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে সরলভাবে দাঁড়াতে হবে।
তারপর সিজদার জায়গার দিকে দৃষ্টি রেখে পার্থিব সকল চিন্তা পরিত্যাগ করে একগ্রচিত্তে আয়াহতায়ালাকে হাজির মনে করে হস্তদ্বয় ঝুলিয়ে ‘ইন্নি অজ্জাহতু’ পড়তে হবে।
পাঠ করা হলে ‘নিয়েত’ পাঠ করে তক্বির অর্থাৎ ‘আল্লাহ আকবর’ বলে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের মূল পযর্ন্ত স্পর্শ করে হাত দুটি নাভির নিচে বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে ‘তাহ্রিমা’ বাঁধবে। স্ত্রীলোক হাত দুটি কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ঐ প্রকার বুকের উপর তাহরিমা বাঁধিবে।
তারপর চুপে চুপে ‘দুয়া সানা’ পাঠ করতে হবে, পরে ‘আউজুবিল্লাহ’ ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে ‘সুরা ফাতিহা’ অর্থাৎ ‘আল্ হামদু লিল্লাহ’ পড়ে ‘আমিন’ বলবে এবং পরে ‘বিস্মিল্লা’ পড়ার পর অন্য একটি সূরা পড়তে হবে।
তারপরে আল্লাহু আকবর বলে রুকু করতে হবে এবং হাঁটুদ্বয়ের উপর দুই হাতের তালু রেখে আঙ্গুলসমূহ বিচ্ছিন্ন করে সামনের দিকে ঝুঁকবে যাতে পিঠ ও মাথা সমান উঁচু থাকে।
রুকুতে গিয়ে তিনবার রুকুর তসবিহ অর্থাৎ ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আজীম’ বলতে হবে।তারপর
তাসমি অর্থাৎ ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে সরলভাবে দাঁড়াতে হবে। মুক্তাদিগণ ‘রাব্বানা লাকাল্ হাম্দ’ পড়ে ইমামের সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়াবে তারপরে ‘আল্লাহু আকবর’ বলার সঙ্গে
সঙ্গে সিজদায় যাবে।
সিজদায় গিয়ে- প্রথমতঃ হাঁটুদ্বয় মাটিতে রাখতে হবে। তারপর হাত দুটি নাক এবং তারপরে কপাল মাটিতে রাখতে হবে এবং নাকের দিকে দৃষ্টি রেখে এবং হাত দুটি কিবলামুখী করে কানের কাছে রাখতে হবে। হাত দুটি কপাল থেকে আলাদা করে রাখতে হবে।
সিজদায় গিয়ে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আলা’ পড়তে হবে। তারপরে ‘আল্লাহু
আকবর’ বলে মাথা তুলতে হবে এবং বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতে হবে (স্ত্রীলোক হলে উভয় পা-ই দক্ষিণ দিকে বার করে রাখবে এবং পাছার উপর ভর করে বসবে।
এই সময় হাত দুটির আঙ্গুল গুলি হাঁটুর উপর কাবাশরীফমুখী করে রাখতে হবে এবং দৃষ্টি বুকের দিকে রাখবে। তারপরে আবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পুনরায় সিজদায় গিয়ে আগের মতো তসবীহ পাঠ করবে।তারপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সোজাভাবে দাঁড়াবে। এইভাবে এক রাকাত নামাজ শেষ হবে।
তারপর বিস্মিল্লাহ্, আল্হামদু লিল্লাহ এবং অন্য একটি সুরা পড়ে পুনরায় আর এক রাকাত আরম্ভ করতে হবৈ এবং প্রথম রাকাতের মতো রুকু, সিজদা ইত্যাদি পড়ে শেষ করতে হবে।কিন্তু এইবার ‘সানা’ (সুবহানাকা) আউজু বিল্লাহ পড়তে হবেনা। এই দ্বিতীয় রাকাতের সিজদাসমূহ শেষ হলে
উঠে দাঁড়াতে হবেনা। বরং বাম পা বিছিয়ে তার উপর স্থির হয়ে বসতে হবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখতে হবে।
হাত দুইটি হাঁটুর উপর রেখে ‘আত্তাহিয়্যাতু’, দরুদ এবং দুয়া মাসুরা অর্থাৎ (পুরা আত্তাহিয়্যাতু) পড়তে হবে এবং পড়া শেষ হলে ডান দিকে ও বাম দিকে মুখ করে ‘আস্সালামু আলায়কুম
অ-রাহমাতুল্লাহ’ বলতে হবে। দুই রাকাত নামাজ এইভাবে পড়তে হবে।
তিন রাকাত নামাজ পড়বার নিয়মঃ-
উপরোক্ত নিয়মানুসারে দুই রাকাত নামাজের বৈঠকে শুধু
‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়েই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সোজা হয়ে
দাঁড়াতে হবে এবং ‘বিসমিল্লাহ ও আল্হামদু’ পড়ে আগের মতো রুকু সিজদা করে বসবে। তারপরে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ ‘দরুদ’ ও ‘দুয়া মাসুরা’ পড়ে সালাম ফেরাবে। এইভাবে তিন রাকাত নামাজ পড়বে।
চাবি রাকাত নামাজ পড়তে হলে আগের লেখা অনুযায়ী তৃতীয় রাকাতে বৈঠক না করে , ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।তারপরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে রুকু সিজদা করে
বসে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ ‘দরুদ’ ও দুয়া মাসুরা’ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
পরে মোনাজাত করবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে দাঁড়িয়ে শুধু ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে রুকু সিজদা দেওয়া কেবল ফরজ নামাজেই করতে হবে। সুন্নত কিংবা নফল নামাজ পড়তে হলে, ‘আলহামদু লিল্লাহর’ পর অন্য কোন একটি সুরা পড়ে রুকু সিজদা করতে হবে।