মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা [Maikel Modhusudon Datto]

আপনি এই লেখা টি পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মানে আপনি নয় এক ছাত্র বা ছাত্রী নয় এক সাহিত্য প্রেমী। যায় হোক মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনাটি [Maikel Modhusudon Datto] সবার জন্যই প্রস্তুস করেছি। এখান থেকে যেমন তাঁর জীবনী সম্পর্কে জানতে পারবেন সাথে সাথে সাহিত্য চর্চা ও জীবনের উত্থান পতন সম্পর্কে তথ্য পাবেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনা [Maikel Modhusudon Datto

ক্লাস ৮ থেকে ১২ পর্যন্তও সকল ছাত্র ছাত্রী রচনাটি মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন। তাহলে চলুন মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ টি মুখস্থ করে নেওয়া যাক বা লিখে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুন – মোবাইল এর বাংলা আর্থ কি? জেনেনিন বাংলা প্রচলিত শব্দ।


ভূমিকা।

উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য রচয়িতা।

তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী লেখক ,প্রথম আধুনিক নাট্যকার ,প্রথম অমৃতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, বাংলা সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম রচয়িতা, সার্থক ট্রাজেডির প্রথম রচয়িতা।প্রথম প্রহসন রচয়িতা।

এছাড়াও তিনি আধুনিক সাহিত্যরস সৃষ্টির প্রথম শিল্পী। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যধারার সংমিশ্রনে নতুন ধরনের মহাকাব্য রচয়িতা তাইতো রবীন্দ্রনাথ তাকে ‘মধু কবি‘ বলে অভিহিত করেছেন।

জন্ম এবং বংশ পরিচয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত পঁচিশে জানুয়ারি ১৮২৪ সালে যশোর জেলার কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদীর তীরে সাগরদাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহন্নবী দেবী। পিতাছিলেন একজন উকিল এবং মাতা জাহ্নবীদেবী ছিলেন একজন শিক্ষিত মহিলা। প্রায় ৭ বছর পর্যন্ত মধুসূদন দত্ত তার মায়ের কাছেই লেখাপড়া করেন।

শিক্ষাজীবন।

বাল্যকালের মায়ের তত্ত্বাবধানে গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া শুরু। ৯ বছর বয়সে কলকাতায় খিদিরপুর গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং ল্যাটিন ভাষার সাথে তার পরিচয় ঘটে। এরপর তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন যেখানে ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও গৌড় দাস বসাক, প্রমুখদের সহপাঠী হিসেবে পান।

এই সময় তিনি নারী শিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে ‘স্বর্ণপদক ‘লাভ করেন। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। মূলত এই সময় তার নামের পূর্বে মাইকেল যুক্ত হয়।

খ্রিস্টান হওয়ার সংবাদ পেয়ে তার বাবা তাকে ত্যাজ্য পুত্র করেন। সেসময় তিনি হিন্দু কলেজে পড়ার অধিকার হারান। এরপর তিনি শিবপুরের বিশপ্ স কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি সংস্কৃত গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় পন্ডিত হয়ে ওঠেন।

কর্মজীবন।

ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন তার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। অগত্যা ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে গিয়ে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত হন। সাথে সাথেই ইংরেজি পত্রপত্রিকা লেখালেখি শুরু করেন। তারপর ‘Spectator ‘পত্রিকায় সহকারি সম্পাদক রূপে কাজ করেন।

দাম্পত্য জীবনে কবির দুই পত্নী ।প্রথম স্ত্রী ইংরেজ কন্যা রেবেকা ম্যাক্টেভিয়াস প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। কোভিদ দ্বিতীয় পত্নীর নাম এমেলিয়া হেনরি

সাহিত্যকর্ম।

মধুসূদন দত্ত তার সাহিত্য জীবনে বিশেষ করে ইংরেজ কবি বাই বনের সাহিত্যকর্ম এবং তার জীবন দ্বারা অত্যন্ত বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। মাদ্রাজে থাকাকালীন Timothy Penpoem ছদ্মনামে, তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ The Captive Ladie এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ Vision of the Past প্রকাশ পাই।

প্রথম জীবনে পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন ।জীবনের দ্বিতীয় পর্বে তিনি নিজের মাতৃভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন।

তখনই তিনি বাংলা নাটক শর্মিষ্ঠা রচনা করেন যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। কৃষ্ণকুমারী পদ্মাবতী, মায়াকানন প্রহসনের মধ্যে বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একই কি বলে সভ্যতা বাংলা সাহিত্যের অপূর্ব নিদর্শন। প্রথম স্বার্থক পত্র কাব্য বীরঙ্গনা কাব্য রচনা করেন যা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে উৎসর্গ করেন।

কবি এই কাব্যগ্রন্থে একুষ্টি পত্র লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শেষ পর্যন্ত ১১ টি পত্র রচনা করেন। তার মধ্যে হল সোমের প্রতি তারা ,দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা , লক্ষণের প্রতি সুর্পনখা, নীলধ্বজের প্রতি জনা প্রভৃতি তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য বাংলা সাহিত্যে অমৃত ক্ষর ছন্দে প্রথম লিখিত কাব্যগ্রন্থ।

এছাড়া চতুর্দশপদী কবিতা বলি এটি কবির শেষ কাব্যগ্রন্থ। ফ্রান্সে থাকাকালীন পাশ্চাত্য সনেটের আদর্শে তিনি এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি রচনা করেন।

এছাড়াও অমৃতাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য তার অন্যতম এক সৃষ্টি চরিত্র চিত্র হিসেবে রয়েছেন রাবণ ইন্দ্রজিৎ সীতা শর্মা প্রমিলা প্রমুখ।

যদিও তিনি বলেছিলেন ‘গাইব মা বীর রসে ভাসি মহাগীত ‘তবুও কাব্যে করুন রসেরই জয় হয়েছে।

অন্তিম জীবন

মাইকেল মধুসূদন দত্তের শেষ জীবন অত্যন্ত দুঃখ ও দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তাছাড়া অমিতব্যয় স্বভাবের জন্য তিনি প্রচুর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

তিনি বাংলা কাব্যগ্রন্থে, কাব্যজগতে মাত্র ৭ বছর যুক্ত ছিলেন। তাই তাকে ক্ষণিকের অতিথি বলা হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে জুন কলকাতার জেনারেল হসপিটাল কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে মধু কবি নিজে হাতে সমাধি লিপি লিখে যান।

মধুসূদন দত্ত বাংলা কাব্য ধারা যে অভিনবত্ব দান করেছেন তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।তিনি এই পৃথিবীতে এখন না থাকলেও বাঙালির হৃদয় মন্দিরে কবি মধুসূদন দত্ত চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

Leave a Comment