ভূমিকাঃ-
একটি গাছের আত্মকথা রচনা [Ekti Gacher Atmakatha Essay] –
আমি একটি গাছ। আমি পৃথিবীর প্রথম আগন্তুক। মানুষের আবির্ভাব এর আগেই আমি মানুষের জন্য বাসর সাজিয়ে বসেছিলাম।
মানুষ পৃথিবীতে এসে আমাদেরই অকৃপণ দানে নিজেদের বাঁচিয়েছে, বেড়ে উঠেছে।আমার মত আরো কত গাছ সর্বংসহা হয়ে সূর্যের প্রখর তার থেকে রক্ষা করে শীতল ছায়া দিয়ে চলেছে। প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে রক্ষার জন্য মুক্তিদাতা হয়েছে। কিন্তু মানুষ আজ চরম নির্মমতায় আমাদের ধ্বংসলীলায় মত্ত।
গাছের অবস্থানঃ-
আমার অবস্থান নিভৃতে, নিরালা পরিবেশে। আমি নিজের মতো অবস্থানে বেড়ে উঠি। প্রকৃতির আবহাওয়ায় আমার বেঁচে থাকার উৎস। ছোট্ট বীজ থেকে অঙ্করিত হয়ে আমি একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরি,প্রকাশ করি।
আমি জ্ঞানী, বিচক্ষণ বলে পরিচিত মানব সমাজ থেকে অনেকটা দূরে থাকতে চেয়েছি।মানবসমাজকে আমরা কখনো কোনভাবেই আঘাত করিনি। বরং মানুষ সত্যসন্ধানে আমাদের কাছে গিয়েছে আমাদের সাহায্য নিয়েই মানুষ বেঁচে রয়েছে।পেয়েছে আহার, নিরাপদ আশ্রয়, জীবনদায়ী বিশুদ্ধ অক্সিজেন, কাঠ, কাগজ, ভেষজ ঔষধ ও শিল্পের অফুরন্ত সম্ভার
মানুষের নির্মম আচরণঃ-
আমি অবাক হই মানুষের নির্মমতায় ও অকৃতজ্ঞ আচরণে। মানুষ গর্ব করে তার সভ্যতার।সেই গর্বে মানুষ গড়েছে নগর, গড়ে তুলেছে শিল্প -কারখানা। কিন্তু সে সবই করেছে আমাদের ওপর হেনে। আমি কথা বলতে পারি না আমার বন্ধুরাও তাই। প্রতিবাদের ভাষা আমাদের নেই ঠিকই কিন্তু মানুষ যে নগর শিল্প গড়ে তুলছে তাতে তো মানুষের নিজের বাঁচার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এতে তো মানুষের জীবনই সংশয়াকুল হয়ে পড়েছে।পৃথিবীও ধীরে ধীরে মরুময় হয়ে উঠছে। আমার মতো একটি গাছকে নষ্ট করার অর্থ তার প্রাণ নষ্ট করা।নিজের জীবনকে নিজেই আঘাত করা। এ তো চরম অবিবেচনা অকৃতজ্ঞতার বাস্তব রূপ।
আমি একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছি মানুষ আমাকে আঘাত করে আমার শাখা কেটে দিচ্ছে। আমার বৃদ্ধি নষ্ট করার অর্থ মানুষের জীবনবৃদ্ধির পথে আঘাত হানা।মানুষ তো তা বোঝে না।সভ্যতা গর্বে গর্বিত মানুষের কি এই রূপ কাজ সমর্থনযোগ্য?
গাছের কথাঃ-
আমি একটি গাছ। প্রকৃতির পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরেছি।নিজের সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে কিছু করার জন্য চেষ্টা করি।মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন চিন্তাশীল প্রাণী, তাদের জন্য আমি ক্ষুদ্র হলেও পাশে থাকি। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত পদার্থকে কন্ঠে ধারণ করে দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ বায়ু জোগান দিই। আমার ঝরা পাতায় মাটি উর্বর হয়।মানুষ তাতে ফসল ফলায়।
আমার শাখার পুষ্প নিয়ে মানুষ দেবতার পায়ে পুষ্পাঞ্জলি পদার্পণ করে।আমার শাখা নিয়ে জ্বালানি করে নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত করে।কত ক্লান্ত মানুষ, প্রাণী আমার ছায়ায় বিশ্রাম নেই তবু আমি কিছু বলি না।আমার কথা,আমাদের মত অন্য গাছেদের কথা উপলব্ধি করে নিজেদের কর্ম ধরার পরিবর্তন করবে। তোমরাও থাকো আমরাও থাকি। আমি তোমাদেরই প্রতিবেশী।
উপসংহারঃ-
মানুষ সভ্য উন্নত জীব।কর্মধারা মহৎ।পৃথিবীর বুকে মহৎ কীর্তির স্রষ্টা। তার মধ্যে আমি গাছ হয়ে একটু তোমাদের পাশে থাকতে চাই। প্রতিবাদহীন নীরব থাকি। এটাই আমার স্বভাব। কিন্তু আমরাও নিজেদের উজাড় করে কিছু করার জন্য তোমাদের পাশে চিরকালীন বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। আমরা পরিবেশবান্ধব।আঘাত করো কিন্তু নির্মূল করোনা। কিছু নাই দাও শুধু তোমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের বাঁচিয়ে রেখো। আমাদের প্রাণের অস্তিত্বই তোমাদের প্রাণ টিকে থাকে এর সত্য কখনো বিস্মৃত হয়ো না।