কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা [Kanyashree Prakalpa Essay]
ভূমিকাঃ-
‘কন্যাশ্রী’ শুধু একটি প্রকল্পের নাম নয়। ‘কন্যাশ্রী’ এক অপরূপ স্বপ্নের বাস্তবায়ন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উচ্চ প্রশংসিত এই কন্যাশ্রী প্রকল্প। এই প্রকল্পের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলার কন্যা।
বঙ্গসমাজের মেয়ের দল। অবহেলা বঞ্চনার যুগান্তে এই প্রকল্প ঘোষণা করলো তাদের সামাজিক সুরক্ষার সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের।
দিকে দিকে ছড়িয়ে গেল এক নতুন আলোর ইশারা।নানা স্তরে নানা কাঠামোয় সমাজে কন্যার ভূমিকা,কন্যার সাফল্যকে নিশ্চিত করতে সরকারি এই প্রকল্প আবির্ভূত হল। নতুন সময়ের, নতুন সমাজের এক ঐক্য অনন্য অঙ্গীকার এক অনবদ্য সংকল্প যা, বিশ্বের দরবারে এক নতুন মুকুট লাভ করেছে।
প্রেক্ষাপটঃ-
কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনার এক করুণ ইতিহাস। আমাদের রাজ্যে প্রায় ১ কোটি ৭৩ হাজার মানুষ আছে যাদের বয়স দশ বছর থেকে ১৯ বছরের মধ্যে এর মধ্যে।
৪৮ শতাংশই মহিলা কিন্তু এই যে বিপুল পরিমাণ নারী শক্তি তাদের জীবন বিকাশের পথ মসৃণ নয় সমাজের দুর্বল পিছিয়ে পড়া এবং হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া এসব মেয়েদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প এই প্রকল্পের মহিমায় কন্যা সন্তানরা আজ উজ্জ্বল নক্ষত্র।
উদ্দেশ্যঃ-
কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হল -“To reduce dropout rate and prevent early marriage.” কিশোরী মেয়েদের প্রত্যেককে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় নিয়ে আসার আরেক নাম কন্যাশ্রী।
১৮ আগেই বিয়ে নয়-মেয়েদের বোঝানোর দায়িত্বের আরেক নাম কন্যাশ্রী।নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো ও নারীর ক্ষমতায়ন কন্যাশ্রীর অন্যতম উদ্দেশ্য।
মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কন্যাশ্রীর প্রধান লক্ষ্য।মেয়েরাই হবে এই সমাজের একমাত্র ধারক ও বাহক সেই লক্ষ্যেই এই কন্যাশ্রীর জন্ম।
প্রকল্পের রূপরেখাঃ-
১০ থেকে ১৮ বছর বয়স এই সময়কালকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে মানুষের জীবন গঠনের কাল। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভাবনা এই বয়সকে পরিচর্যা করবার জন্যই।
নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্র জানিয়েছে যে যেসব মেয়েদের পরিবারের বার্ষিক আয় এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা বা তার কম তারা বছরে ৫০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবে এবং ১৮ বছর অবধি পড়া চালিয়ে গেলে ১৮ বছর বয়সে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার ২৫ হাজার টাকা প্রদান করবে।
২০১৫ সালের রাজ্য বাজেটে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য চলতি বছরে বরাদ্দ হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা।
কন্যাশ্রী এখন বিশ্বশ্রীঃ-
কন্যাশ্রী এখন বিশ্বশ্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর স্বপ্নের কন্যাশ্রী ৬২টি দেশের ৫৫২ টি প্রকল্পকে পিছনে ফেলে জাতিসংঘে সেরার সেরা শিরোপা লাভ করেছে ২০১৭ সালের ২৩ শে জুন তারিখ।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যঃ-
কন্যাশ্রী প্রকল্প আরম্ভ হওয়ার পর আমাদের সমাজের মেয়েদের মধ্যে যে যে বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ইতিমধ্যেই চোখে পড়েছে তা হলো নিম্নরূপ
১/ মেয়েদের বাল্যবিবাহে অনীহা। বহু ক্ষেত্রে এই ধরনের বিবাহে মেয়েরাই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে।
২/ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে টাকা-পয়সার অভাবে মেয়েদের পড়াশোনা যে বন্ধ হয়ে যেত তা অনেক খানি প্রতিরোধ করা গেছে। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের পর তারা এগিয়ে চলেছে স্নাতকের দিকে।
৩/ আমাদের রাজ্যের গরীব মেয়েদের অপুষ্টি ও অপুষ্টি জনিত ব্যাধির ক্ষেত্রেও কন্যাশ্রী প্রকল্প উন্নতির দিশা দেখাচ্ছে।
৪/ দারিদ্র্যের কারণে নারীপাচার যে সামাজিক ব্যাধির মতো আমাদের রাজ্যে ছেড়ে গিয়েছিল কন্যাশ্রী প্রকল্প পালন করছে ইতিবাচক ভূমিকা।
৫/ সরকারী তথ্যঅনুযায়ী প্রায় ২২ লক্ষ মেয়ে ইতিমধ্যেই এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে।
উপসংহারঃ-
কন্যাশ্রী প্রকল্প শুধু দেশের মধ্যে নয় গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রকল্প স্বপ্ন জাগিয়েছে পশ্চিমবাংলার মেয়েদের চোখে। তারা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাদের জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে আজকের নারী তাই বলতে পারেন ‘আমি কন্যাশ্রী কন্যা /ভবিষ্যতের অনন্যা।’