একটি নির্জন দুপুর : রচনা [Ekti Nirjon Dupur Essay + PDF]
ভূমিকাঃ-
প্রাকৃতিক নিয়মে দিন-রাত্রি নেমে আসে ধরার ধূলিতে। প্রভাতের নতুন সূর্য ছড়িয়ে দেয় আলতো আলো। ধীরে ধীরে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীপ্ত আলো মেলে ধরে। উজ্জ্বল আলোকিত ধরার বুকে আবার এক সময় নেমে আসে দিগন্তের অবসানে শেষ মৃদু রশ্মি।সন্ধ্যার কালো আঁধারে ছেয়ে যায় আলোকিত পৃথিবী।শাশ্বত এক নিয়মের বাঁধনে থেকেও রূপময়ী প্রকৃতি মেলে দেয় রূপের পসরা।
হঠাৎ সেদিন আমি পেলাম রুদ্র বৈশাখের তপ্ত দুপুরের এক চকিত আহবান। এক নতুন বিস্ময় জাগলো মনে। নির্জন দুপুরের এত গভীর আকর্ষণ তা আমার জানা ছিল না। নির্জনতাও মানুষের মনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে তা জানা ছিল।এক মনো-মোহিনী আবেশে আমার মন মুগ্ধ। সে স্মৃতি আজও আমার মনের মনিকোঠায় অম্লান।
গ্রীষ্মকালীন দুপুরের চিত্রঃ-
গ্রীষ্মকাল। সকালবেলার কর্মব্যস্ততা একটু বেশি। দুপুরের আগেই কাজ সেরে ঘরে ফেরার তাগিদ। গ্রীষ্মবকাশ থাকায় ঘরের মধ্যেই কাটছিল দিন। চোখ পড়ে গেল দূরের উন্মুক্ত প্রান্তরের বুকে। একি প্রখর দিপ্তি !আকাশের বুক চিরে যেন আগুন ঝরছে।খাঁ খাঁ করছে প্রান্তর। মানুষজন চোখে পড়ছে না।বাড়ির সামনে একটি বড় পুকুর। তারপরেই বিস্তৃত খোলা মাঠ। সামান্য দূর দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা।
কয়েকটি বড় অশ্বত্থ গাছ সেই রাস্তার পাশেই। তারই নিজের শুয়ে রয়েছে কয়েকটি গরু। পুকুরে বেশ কিছু কচিকাঁচা থেকে বুড়ো অনেকটা সময় কাটিয়ে তবে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে।ধীরে ধীরে পুকুরের ভিড়ও আর থাকলো না। কয়েকটা পানকৌড়ি ডুব দিয়ে গেল। রোদে পোড়া কাকেরা একবার করে জলে গা ভিজিয়ে ডানা ঝাঁপটিয়ে চলেছে।
পথ চলতি মানুষের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। দু- একজন ফেরিওয়ালার ক্লান্ত কণ্ঠস্বর শোনা গেল। গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়তে পুড়তে সেও জীবন বাঁচনোর লড়াইয়ে ব্যস্ত।
মনের প্রতিক্রিয়াঃ-
প্রকৃতির বুকে এক নির্জনতার পরিবেশ। এ যেন রূপকথার দেশের ঘুমন্ত নির্জন রাজপুরীর ছবি আমার সামনে বিরাজমান।
কোন এক অজানা আকর্ষণে আমার মন আচ্ছন্ন। প্রকৃতির এই দারুন রুক্ষতার মাঝে নির্জনতাকে সঙ্গী করে খুঁজে পেয়েছে মনের দোসর। শান্ত প্রান্তরের কোণে রাখাল বেণুর সুর ভেসে আসে কানে। প্রকৃতি যে এত মায়াময় তারই প্রমাণ দিয়ে গেল এই রুদ্র বৈশাখের নির্জন দুপুর। কোন মায়াময় অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে খেলা চললো নির্জন দুপুরে। দূর আলোর হাতছানিতে সাড়া দিয়ে আমি তখন অন্য জগতে। খাঁ খাঁ রোদ্দুরের নির্জন পথে আমি একা। একটা গাছের নিচে দাঁড়ালাম কিন্তু পাতার আওয়াজ বড় শত্রু মনে হল।চকিতে মনে হয় কারো উপস্থিতি। ফিরে চায়। শূন্য। একটা কাক কা-কা করে উঠলো, ভয়ে শরীরটা ঝমঝম করে উঠলো।মনে হলো যেন এক অশরীরী আত্মা উৎপাত শুরু করেছে।
উপসংহারঃ-
মায়ের ডাকে নিজেকে ফিরে পেলাম।আমি বারান্দায়। আমি এতক্ষণ প্রকৃতির রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন দিগন্তে আলোর তীব্রতা কমে গিয়েছে। রোদের রং বদলাতে শুরু করেছে।
নির্জন দুপুরের চকিত আবেশ – আমার মনের মধুর স্মৃতিতে ধরা থাকবে।আমার সত্তাতে নাড়া দিয়ে গেল নির্জন দুপুর।এক নতুন উপলব্ধি মনে জেগে উঠল। প্রকৃতি ও মানুষ এক অঙ্গ।জন্ম-জন্মান্তরের নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান।আজকের এই গ্রীষ্মের দুপুর আমার জীবনের এক চিরসাথী হয়ে রইল যা কখনোই ভোলা সম্ভব না।