দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা [Doinondin Jibone Bigyan Essay]
![দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা [Doinondin Jibone Bigyan Essay]](https://bornoporichoy.com/wp-content/uploads/2022/08/Screenshot-1944-05-17-at-10.39.42-PM.png)
ভূমিকাঃ-
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারিনা। বিজ্ঞান জীবনে এনে দিয়েছে গতি।আমাদের চারপাশে বিজ্ঞানের অভাবনীয় চোখ ধাঁধানো সাফল্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জীবনকে সুন্দর করার জন্য চাই বিজ্ঞান শিক্ষা।বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েই বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব।নয়তো অন্ধকার পৃথিবীতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে হবে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে জ্ঞান যার মাধ্যমে মানুষ জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারছে।
বিজ্ঞান কি?
বিজ্ঞান হলো বিমূর্ত জ্ঞান।বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে যার বাস্তব রূপায়ণ ঘটে, উন্নত সভ্যতার মূল চাবিকাঠি হল বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রাঃ-
যেদিন থেকে মানুষ আগুনে ব্যবহার শিখেছে, চাকা আবিষ্কার করেছে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। এরপর বিজ্ঞান সারথী হয়ে এখনো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সভ্যতাকে। শিল্প বিপ্লবের সময়কালে বাষ্প শক্তি আবিষ্কার এই জয়যাত্রাকে কিছুটা এগিয়ে দিল এরপর এলো বিদ্যুৎ শক্তি যা আজও আমাদের কাছে বর্তমান। বিজ্ঞান প্রযুক্তির সর্বশেষ শক্তিশালী আবিষ্কার হল পারমাণবিক শক্তি। এরূপ বিজ্ঞানের দানে প্রতি নিয়ত আমরা সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠছি।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের দানঃ-
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের জীবন ও বিজ্ঞান যেন অবিচ্ছেদ্য সত্তা। সকালে ঘুম ভাঙ্গা থেকে রাত্রিতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনে ছায়ার মত সঙ্গী বিজ্ঞান। সকালে ঘড়ির এলার্ম এর আওয়াজে শুরু হয় আমাদের সকাল। সারা বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সংবাদ মাধ্যম এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছে যায়। বিশ্ববার্তা বেতারের মাধ্যমে আমাদের কাছে ঘটে যাওয়া ঘটনা পৌঁছে যায়। বিভিন্ন ছবি ফুটে ওঠে টেলিভিশনের পর্দায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রিয়জনের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে নিই।
আর বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় গড়ে উঠছে যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি।প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান আমাদের চাওয়া গুলো পূরণ করেই চলেছে। বিজ্ঞান মানুষের বাস গৃহগুলি টিভি,ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এসি, ওভেন ইত্যাদির উপস্থিতিতে পরিণত করেছে ছোট ছোট বিজ্ঞান কক্ষে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান যথেষ্ট। ভূমিকর্ষণ, বীজ বপন, জ্লসেচ,ফসল তোলা,ঝাড়াই-মাড়াই, সংরক্ষণ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের অকৃপণ দানেই মরুভূমি হয়ে উঠেছে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা।
শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
শিল্পে বিপ্লব এনেছে বিজ্ঞান।বিজ্ঞান চালিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দানবীয় শক্তি কাজে ব্যাপক গতি এসেছে। কলকারখানা, ফ্যাক্টরি, শিল্প সংস্থা প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞান তার রাশি রাশি ডালি নিয়ে হাজির।কম্পিউটার নামক গণক যন্ত্রের আবিষ্কার বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
বিজ্ঞান চিকিৎসাজগতে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক ওষুধপত্র ও টিকা আবিষ্কারের ফলে বহুলাংশে মৃত্যুহার কমেছে। এক্সরে, ইসিজি, হৃৎপিণ্ড পরিবর্তন,ব্রেন অপারেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের জয়জয়কার।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞানঃ-
শিক্ষা সংক্রান্ত অধিকাংশ জিনিসই বিজ্ঞানের দান। বই,খাতা, কলম, বোর্ড সবই বিজ্ঞানের দান। আজকালকার শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থান করে নিয়েছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা অর্থাৎ ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির নানা উপকরণ।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানঃ-
যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান এনেছে গতি, দূর করেছে নিকট।মানুষ আজ পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে অসীম আকাশে পাড়ি দিচ্ছে বিজ্ঞানের দানে।
অবসর বিনোদনে বিজ্ঞানঃ-
মানুষের কর্মজীবনে ক্লান্তি দূরীকরণে অবসর বিনোদনের জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে টিভি, সিনেমা, কম্পিউটার মোবাইল আরো কত কিছু।
প্রযুক্তিবিদ্যায় বিজ্ঞানঃ-
দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এসেছে।ফেসবুক, ইমেইল, ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে মানুষ দ্রুত কোন সংবাদ একে অপরের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। স্মার্টফোনের এক ছোঁয়ায় তামাম দুনিয়া চলে এসেছে হাতের মুঠোয়।
বিজ্ঞানের কুফলঃ-
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চব্বিশ ঘন্টায় আমরা বিজ্ঞান নির্ভরশীল। বিজ্ঞান ছাড়া জীবন যেন অপরিপূর্ণ। তবে প্রদীপের তলায় যেমন অন্ধকার থাকে ঠিক তেমনি বিজ্ঞানেরও এক হাতে রয়েছে সুধা পাত্র ও অপর হাতে রয়েছে বিষপাত্র। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ বিজ্ঞানের অগ্রগতি। বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান হয়ে মানুষ আজ মারনাত্মক অস্ত্র আবিষ্কার করেছে যার ফল নিশ্চিত ধ্বংস।
উপসংহারঃ-
বিজ্ঞান যেভাবে দৈনন্দিন জীবনে আমূল পরিবর্তন করে চলেছে ঠিক সেই ভাবে বিজ্ঞান আবার কিছু কিছু ধ্বংসাত্মক দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। তবে মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো ঠিক নয়। পৃথিবীতে এখনো বিবেকবান মানুষের অভাব নেই।ধীরগতিতে হলেও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হচ্ছে।আশা করা যায় মানুষ এই বিজ্ঞানকে সার্বিক মানব কল্যাণে ব্যবহার করবে। বিজ্ঞান কোটি কোটি মানুষের আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবে।পৃথিবী হইতো মুক্তি পাবে বিশ্বায়ণের হাত থেকে।