ভূমিকাঃ-
বইমেলা প্রবন্ধ রচনা [Boimela Essay] – বই মানুষের সুখ দুঃখের সাথী। মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা বই, যা মানুষের শুভবুদ্ধি জাগরণে, অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের মেলবন্ধনে সহায়তা করে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে শুধু আনন্দ লাভ এবং মনের কোমল অনুভূতি চর্চায় হয় না মানুষের অগ্রগতি বা উন্নয়নের পরিচায়কও বই। বইপ্রেমী মানুষের কাছে ‘বইমেলা’ রত্নের ভান্ডারসম।
বঙ্গের বুকে বইমেলাঃ-
শীত ঋতুতেই হয় বইমেলা। ১৯৭৬ সালে ৫ই মার্চ ধন্যবাদ বর্ষিত হল পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ডের মাথায়। কলকাতা ময়দান কে পুনর্জীবন দিয়ে জন্ম হলো বইমেলার। পরে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতি’ কর্তৃক পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থমেলা নামে বইমেলার যাত্রা শুরু হয়।
বইমেলা কেন?
বইমেলা দেশ বিদেশে আজ প্রায় সর্বজনবিদিত। বিদেশ থেকে বইয়ের সম্ভার নিয়ে প্রকাশরা উপস্থিত হন এদেশে।আবার আমাদের দেশের মানুষ কৃষ্টি, ঐতিহ্যবাহী চিন্তার পসরা নিয়ে হাজির হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। বইকে মানুষের সামনে প্রকাশ করেন প্রকাশক। বই পরেন পাঠক। বই লেখেন লেখক। এই ত্রয়ীর সমন্বয়ের মিলিত রূপ নিয়ে বইয়ের জগৎ তৈরি হয়েছে।
বইমেলার শুরুঃ-
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বইমেলা প্রথম ভারতে অনুষ্ঠিত হলেও এর শুরু বিদেশে অনেক আগেই। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির লাইপৎসিগ শহরে প্রথম বইমেলার সূত্রপাত হয়েছিল।বিস্তৃতাকারে শুরু হয় ফ্রাঙ্কফুট শহরে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে।১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে প্রকাশক ও বিক্রেতা যৌথ প্রচেষ্টায় প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। এরপর ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের উদ্যোগে মুম্বাইতে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে বইমেলার আয়োজন হয়। কলকাতার শিশুদের জন্য প্রথম বই মেলা বসেছিল।
বৈচিত্র্যে ভরা বইমেলাঃ-
বইমেলাকে এখন যেভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপিত করার প্রচেষ্টা চলছে তা এক অর্থে অভিনব।সংস্কৃতির চর্চা বলতে যা বোঝায় তার একটি পূর্ণচিত্র পাওয়া যায় বইমেলায়।এখানে ছোট বড় সবাই নানাস্বাদের বই পায়।তার সঙ্গে মেলায় হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান।কোনো মণ্ডপ সংগীত মূর্ছনায় আবিষ্ট, কোথাও নাট্যাভিনয়, কোথাও বা ছড়া কবিতায় ভরা মিষ্টি কন্ঠের আকর্ষণ। কোন স্টলে বহু প্রত্যাশিত অদেখা লেখক এর উপস্থিতি হৃদয়কে উদবেল করে তোলে। এছাড়া থাকে নানা রকম খাবারের দোকান ও মজাদার দর্শক। সব মিলিয়ে মেলায় বৈচিত্র্য, বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত হয় বইমেলা।
বইমেলার কিছু অভাবঃ-
মানুষ নতুনত্বের পিয়াসী। নিত্যনতুন রূপের সন্ধান পেলেই ছুটে যায় মানুষ। ছোট পরিসরে দর্শকদের স্থান সংকলন হয় না। বড় সমস্যা যানবাহনের প্রবেশপত্র সংগ্রহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
উপসংহারঃ-
বর্তমান কর্মব্যস্ততার যুগে অনেকে বই পড়াকে সময়ের অপচয় মনে করে দুরদর্শনের আশ্রয় নেয়। অনেকের ধারণা বইমেলা মিলন মেলা এবং বেড়ানোর জায়গা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ সত্য নয় বইমেলা দেশ ও জাতির অগ্রগতির ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। পাঠক -লেখক- প্রকাশক পরস্পর পরস্পরকে বোঝবার ও জানবার মিলন স্থল এই বইমেলা। শুধু মেলা কর্তৃপক্ষ বা আয়োজকদের নয় আমাদেরও নজর দিতে হবে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি দিকে তবেই জ্ঞানের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হবে।