বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী / বন্ধু রচনা [Boi Manusher Srestho Songi Essay]

বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী / বন্ধু রচনা [Boi Manusher Srestho Songi]

বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী / বন্ধু রচনা [Boi Manusher Srestho Songi Essay]

ভূমিকাঃ-

শ্রেষ্ঠ পল্লী কবি জসীমউদ্দীন বলেছেন ‘বই জ্ঞানের প্রতীক,বই আনন্দের প্রতীক ‘। জ্ঞান আর আনন্দ ছাড়া মানব জীবন নিশ্চল হয়ে পড়ে। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, সুবাসিত করতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।আর জ্ঞান অর্জন করতে হলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজ এবং সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জ্ঞান দান করে।অতএব বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ। আবার সভ্যতার চাবিকাঠিও বটে। তাই আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে জ্ঞান অর্জন ছাড়া জ্ঞানের বিকাশ সম্ভব নয়।

প্রাচীন যুগ ও গ্রন্থ পাঠঃ-

সেই প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ বই পড়তে অভ্যস্ত। প্রাচীনযুগের বই পড়াটা নাগরিকদের মধ্যে একটা বড় রকমের মর্যাদার ব্যাপার ছিল। বর্তমান ইউরোপে বই পড়া সভ্য সমাজের একটি সাংস্কৃতিক ব্যাপার বলে বিবেচিত।এককথায় বই পড়ার চল সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই।

পাঠাগারের ভাণ্ডারঃ-

বই পড়া সর্বকালের সর্বদেশের মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচি মাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে আর এই শখ মেটানোর অন্যতম স্থান পাঠাগার।যেখানে অসংখ্য পাঠ্যপুস্তকের সমাহার থাকে।

বই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদঃ-

একটি উন্নত মানের বই বা পুস্তকই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।যার সাথে পার্থিব কোন ধন-সম্পদের তুলনা হতে পারে না।মানুষের ধন রত্ন,অঢেল সম্পদ একসময় নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু একটি ভালো বইয়ের আবেদন কখনো হারিয়ে যায় না।তাই আমরা বই পড়তে ভালোবাসি এবং বই পড়ি এবং বই পড়ার মধ্যে নিজেকে মাতিয়ে তুলি এককথায় বই পড়ার মধ্যে যেন স্বর্গ সুখ লাভ হয়।

জ্ঞানের ভাণ্ডারঃ-

বই -ই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত জন্মদাতা। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস ও সভ্যতা, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার, জ্ঞানী ব্যক্তিদের চিন্তাধারা ও জীবন দর্শন প্রভৃতি বিষয় আমরা কেবল বই পড়ার মাধ্যমেই জানতে পারি। একমাত্র বইই আমাদের দেয় এ বিশ্বের জানা-অজানা বহু রহস্যের সন্ধান। অতএব বলা যায় জ্ঞান লাভের উৎস হিসাবে বইয়ের কোন বিকল্প হতে পারে না এক কথায় বই হল একমাত্র জ্ঞানের ভান্ডার।

আনন্দ এবং মানসিক সুস্থতাঃ-

দেহের খাদ্য ভাত- রুটি এবং মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই। মনকে সুস্থ রাখার জন্য ভালো বইয়ের সঙ্গ প্রয়োজন। বই এক অপার্থিব আনন্দের উৎস। অতএব সমস্যা ক্লিষ্ট জীবনে গ্রন্থের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না।এক কথায় বইয়ের মধ্যেই রয়েছে অফুরন্ত আনন্দ। যা আমাদের মানসিকভাবেই সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

প্রকৃত বন্ধুঃ-

বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। বই মানুষের অন্তর চক্ষু খুলে দেয় একটি ভালো বই পারে ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তুলতে।একটি উত্তম বই মানুষকে মহৎ হতে শেখায়। মনকে প্রসারিত করে বুদ্ধির বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে করে তোলে পরিমার্জিত। অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তনা আগ্রহ তা একমাত্র বই পড়ে মেটানো যায়। এক কথায় বলতে গেলে বই আমাদের অফুরন্ত জ্ঞানের ভান্ডার দেয় এবং সমস্ত সখ-আহ্লাদ পূরণ করে।

সংস্কার থেকে মুক্তিঃ-

অজ্ঞতা ও কুসংস্কারমুক্ত জীবন গড়ার প্রয়োজনে গ্রন্থ পাঠে মনোযোগী হওয়া দরকার।একটি ভালো বই মানুষকে প্রকৃত সুখ দেয়। মনোন, মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির শানিত করে তাই জীবনকে বুঝতে হলে অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ অবশ্য প্রয়োজন।

উপযোগিতাঃ-

বই মানুষের একঘেঁয়ে জীবনে আনে বৈচিত্র‍্য, মানুষকে দেয় স্বস্তি ও অপার্থিব শান্তি।মনোজগতের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে। মহামানবদের কর্ম স্পৃহা আর সহিষ্ণুতা আর ত্যাগ তিতিক্ষার কাহিনী বই পড়েই জানা যায়। বইয়ের সাহায্যে ঘরে বসেই আবার বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থা, জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। বই থেকে যা কিছু শেখা যায় তা অন্য কোন মাধ্যম থেকে লাভ করা সম্ভব নয় এক কথায় বই হল একমাত্র জ্ঞানের উৎস।

উপসংহারঃ-

বই হলো আয়নার মতো যাতে আমাদের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বই সম্পর্কে রবি ঠাকুরের মন্তব্য বই হচ্ছে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সাঁকো। আজকের দিনে বই বিহীন কক্ষকে আত্মা বিহীন দেহের সঙ্গে তুলনা করা চলে। প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুস্তাফা আলী বলেছেন ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’।সব মিলিয়ে বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী এ কথা বলা যায়।

Leave a Comment