বাংলার উৎসব | বাঙ্গালীর উৎসব রচনা [Banglar Utsav Essay PDF]

সব বছরের সমস্ত পরীক্ষার এক বিশেষ গুরুত্বও পূর্ণ রচনা হলো বাংলা উৎসব তথা বাঙ্গালীর উৎসব। সুতরাং আমাদের আর এক কদম বাড়ালাম এই রচনা টি উপচাপনার উদ্দেশ্যে। আশা করবো এটি পাঠ করলে তোমাদের খুব ভালো লাগবে এবং সহজেই মনে রাখতে পারবে। সর্ব পরই তুমি জানিতে পারবে আসলো বাঙ্গালীর জীবনে তেরো পার্বণ গুলো কি?

এই রচনাটি আরো কিছু বিশেষ নে পরিচিত যেগুলো হলো –

বাংলার উৎসব | বাঙালির উৎসব | বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ | বাংলার উৎসবের একাল ও ওকাল | বাংলার উৎসবের অতীত ও বর্তমান |

বাংলার উৎসব | বাঙ্গালীর উৎসব রচনা [Bangalir Utsob Eaasy]

ভূমিকা

বাঙালির জীবনে আছে দুঃখ দারিদ্র্য অভাব অনটন। কিন্তু বাঙালির জীবনে অতীতকে বর্তমান বা ভবিষ্যতকে এগুলো স্তব্ধ করতে পারে নি আসার পারবে না।

উৎসবের প্রদান বৈশিষ্ট্য হল বাঙালির জীবনের গ্লানি দুঃখ ক্লান্তি দূর করে এক আশা আলোর উদ্ভাবন ঘটানো। শুধু আজ নয়, সেই অতীত থেকে উৎসব এনেছে কর্মে নতুন উৎসাহ ।

হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি মাসে একবার একাধিক উৎসব বাঙালি পালন করে থাকে তাই বাঙালির জীবনের এক বিশেষ প্রবাদ বাক্য বারো মাসে তেরো পার্বণ।

কত রকম উৎসব আমরা পালন করি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেওয়া মুশকিল। তবুও আমরা চেষ্টা করব উৎসবের বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র কে উদঘাটন করার।

উৎসবের তাৎপর্য

বাঙালির উৎসবের মূলে আছে এক অবিচ্ছিন্ন ধর্মবোধ, আড়ম্বর, জাঁকজমক। শুধু বিলাস-বাসন বা আরম্ভর বড় কথা নয়, কল্যানই বাঙালি উৎসবের প্রধান আদর্শ। আমার যা বাঙালির যা কিছু তা সকলের স্পর্শে ধন্য হোক। এই হল মূল কথা।

উৎসবের বৈচিত্র অনুসারে বাঙালির উৎসবকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

1. ধর্মীয় উৎসব – দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, জগধাত্রী পূজা, জন্মাষ্টমী, নীল পূজা, চড়ক, শিব, চতুর্দশী, দল যাত্রা, রাস উৎসব ইত্যাদি।

2. ঋতু উৎসব – নবান্ন, পৌষ পার্বণ, বর্ষামঙ্গল ইত্যাদি

3. সামাজিক উৎসব -বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, রাখি বন্ধন, অনুপ্রাসন ইত্যাদি

4. জাতীয় উৎসব – স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্র জয়ন্তী, গান্ধী জয়ন্তী নববর্ষ


ধর্মীয় উৎসব

হিন্দু ধর্মের উৎসবগুলির মধ্যে সিদ্ধিদাতা গণেশ পূজা দিয়ে আরম্ভ হয় তারপর দশহারা রথযাত্রা, রাখি পূর্ণিমা, মনসা পূজা, বিশ্বকর্মা পূজা। এরপর আসে বাঙালি শ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গাপূজা। এটি বাঙালির জাতীয় পূজা এরপর কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পূজা। তারপরে অমাবস্যায় কালী পূজা ও দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়।

এরপর আছে কার্তিক পূজা, জগধাত্রী পূজা, মাঘ মাসের সরস্বতী পূজা, বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হয় অন্নপূর্ণা পূজা বাসন্তী পূজা ও শেষে চড়ক পূজা।

তাছাড়া মুসলমানদের মহরম ঈদুল-ফিতর, শবে বরাত ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টানদের বড়দিন, গুড ফ্রাইডে ইত্যাদি উৎসব পালন করা হয়।

ঋতু উৎসব

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে উৎসবেরও পরিবর্তন হয়। বর্ষা আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষরোপণ উৎসব। এছাড়া বর্ষামঙ্গল উৎসব, শেষ বর্ষণ উৎসব পালিত হয়।

শরৎকালে শারদীয় উৎসব। মাঠে পাকা ধান ঘরে এলে অঘ্রাণ মাসে নতুন ধানের উৎসব নবান্ন উৎসব। পৌষ মাসে পৌষ মেলা, পিতা-পার্বণ হয়।

ফাল্গুন মাসে আসে রঙের উৎসব দোলযাত্রা ও হোলি, তারপর চৈত্র মাসে শূন্য প্রান্তরে বছর বিদায় নেয়।

সামাজিক উৎসব

সারা বছর বাংলার ঘরে ঘরে উৎসব লেগেই থাকে অন্ন পাষাণ, উপনয়ন, বিবাহ, শ্রাদ্ধ শান্তি, জামাই ষষ্ঠী, ভাতৃ দ্বিতীয় ইত্যাদি উৎসবের মধ্যে প্রাণশক্তি রয়েছে। জন্মগ্রহণে উৎসব মৃত্যুতে উৎসব জীবনের প্রতি পদক্ষেপে উৎসব আর উৎসব বাঙালির জীবনকে মধুময় করে তোলে।

জাতীয় উৎসব

বাঙালির উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি নতুন উৎসব। এগুলো আবার জাতীয় মর্যাদা লাভ করেছে 15 ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস।

২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস সারা ভারতে পালিত হয় তাছাড়া। তেইশে জানুয়ারি গান্ধীজী জয়ন্তী হিসাবে পালন করা হয় ।

অতীত কালের উৎসব

এক সময় আমাদের উৎসব গুলির মধ্যে ভাবের প্রাধান্য ছিল । আড়ম্বর প্রাধান্য ছিল না। পূজা পার্বনে বা পারিবারিক উৎসবে মানুষ সমা যোগদান করত। এবং কাজকর্মে ও আনন্দ সকলে ভাগ করে নিত। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় উৎসব হয়ে উঠতো সর্বাঙ্গ।

সুন্দর উৎসব গুলিতে বিশাল কিছু আর্থিক অবস্থার প্রকাশ ছিলোনা বটে কিন্তু তা উৎসবের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে ওঠেনি, দাতা এবং গ্রহীতার দান সমবেত মনো ভাবাপন্ন বিষয়টি ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক ও মধূর্যতাই পরিপূর্ণ।

আধুনিক কালের উৎসব

বর্তমানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে উৎসবেরও পরিবর্তন হতে চলেছে। এখন উৎসবে ভাবের পরিবর্তন ও আড়ম্বর প্রদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচজন অংশগ্রহণ করুক এবং উৎসব আরো বসু ধম ধাম করে পালন হোক আমরা আর তা চায়না।

পরিবর্তে উৎসব গুলি হয় উঠেছে ব্যাক্তি কেন্দ্রিক। নৈতি কোথায় বলাযায় বর্জিত উৎসব গুলি আজ বড়ই বিশ্রী লাগে। উৎসবের আদর্শকে মলিন করে দেয়।

উপসংহার

মত মোটা ভাবে বলাযায় বাঙালির সমবেত অতীতকালের সেই গৌরব আর নেই। এমন একদিন ছিল যেদিন উৎসবে ছিল আনন্দ। কিন্তু বর্তমানে ব্যক্তি কেন্দ্রিক উৎসবে বাঙালির অতীত গৌরবকে হারিয়েছে। আজ উৎসব সূক্ষ্ম নিরস প্রাণহীন। যন্ত্রের যুগে। উৎসবে আসে প্রচুর মাইক তাতে বাজানো হয় অসংখ্য হিন্দি গান। ঘটা করে মন্ডপ সাজানো হয় এবং আলোক শয্যায় সজ্জিত করা হয়। কিন্তু তাতে যেমন প্রাণ নেই রস নেই। এখন শিক্ষিত সমাজের মানুষগুলোর মনে একটাই প্রশ্ন “বাঙালির জীবনের সেই আনন্দের দিনগুলো কি আর কখনোই ফিরে আসবেনা?

Leave a Comment