আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা [Antorjatik Matribhasha Dibosh Essay]

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা [Antorjatik Matribhasha Dibosh Essay]

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা [Antorjatik Matribhasha Dibosh Essay]

ভূমিকাঃ-

মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি,তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ।মানুষের পরিচয় এর সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ।

মা ও মাটির মতই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়।১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা যা আজও আমাদের কাছে তরতাজা।

মাতৃভাষা কি?

সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষায় বোঝায়।একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা।

মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবাহমান। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন বাংলা আমাদের অহংকার।

মাতৃভাষার গুরুত্বঃ-

মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা আকাঙ্ক্ষা,আবেগ- অনুভূতি।জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।

জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোন বিকল্প হতে পারে না।শিক্ষা -দীক্ষা- জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম।

মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিঃ-

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসছে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মোঃ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে দেন উর্দু এন্ড অনলি উর্দু শ্যাল বি দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অফ পাকিস্তান’ তখন প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা।

1952 সালের 21 শে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক,শফিক,সালাম,বরকত সহ বহু তরুণের তাজা রক্তে।

ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম ইতিহাস পৃথিবীর বুকে আর নেই।এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে আজও পালন করে থাকে।

আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্যঃ-

বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবময় ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০ তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট বড় প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতি ও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্যঃ-

বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতোই পরম সমাদরের বস্তু। মাতৃভাষায় আত্মপ্রকাশের যথার্থ মাধ্যম।

একুশে ফেব্রুয়ারির মত একটি ঐতিহাসিক দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার প্রতিটি মানুষ করার মধ্যে প্রতিটি মানুষকে তার মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার একটি শুভ প্রচেষ্টা নিহিত আছে।

উপসংহারঃ-

‘একুশ আমার চেতনা/একুশ আমার গর্ব’ কেবল বাংলা ভাষাকে নয় পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার। সর্বশেষে একথায় বলা বাঞ্ছনীয় মাতৃভাষার প্রতি আমাদের প্রতিটি মানুষকেই যত্নশীল হতে হবে কারণ এ ভাষা আমার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ভাষা অর্থাৎ আমি যেদিন থেকেই কথা বলা শুরু করেছি সেই মাতৃভাষায় আমার জীবনের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় মিশে একাকার হয়ে গেছে।

Leave a Comment